Svoboda | Graniru | BBC Russia | Golosameriki | Facebook
Transfiguration pending
বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রণব রায় (গীতিকার)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রণব রায়
জন্ম(১৯১১-১২-০৫)৫ ডিসেম্বর ১৯১১
মৃত্যু৭ আগস্ট ১৯৭৫(1975-08-07) (বয়স ৬৩)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
পরিচিতির কারণকবি ও গীতিকার
পিতা-মাতাদেবকুমার রায়চৌধুরী (পিতা)

প্রণব রায় (ইংরেজি: Pranab Roy) (৫ ডিসেম্বর, ১৯১১ — ৭ আগস্ট, ১৯৭৫ বাংলা গানের স্বর্ণযুগের প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার। বিশ শতকের তিনের ও চারের দশকের আধুনিক ও চিত্রগীতির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রবাদ প্রতিম 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্স'-এর (অজয় ভট্টাচার্য, শৈলেন রায় ও প্রণব রায়) অন্যতম ছিলেন তিনি।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

প্রণব রায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতার বেহালা বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বংশে। পিতা ছিলেন দেবকুমার রায়চৌধুরী। ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিটি কলেজে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাবশিষ্য ছিলেন এবং তার রচনার প্রতি আকর্ষণ ছিল। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে প্রণবের কবিতার প্রতি ভালোবাসা ছিল। কলেজ জীবনে স্বদেশী আন্দোলনে অংশ নেন। 'বিশ্বদূত' পত্রিকায় তিনি প্রথম 'কমরেড' শীর্ষক এক কবিতা লেখেন এবং সেজন্য তাঁকে কারাবাস করতে হয়। পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। []

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

জেল থেকে বেরিয়ে গান লিখতে আরম্ভ করেন। ইতিমধ্যে তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন। গীতিকার হওয়ার প্রেরণা পেয়েছিলেন কবির কাছ থেকে। তার রচিত চারটি গান কাজী নজরুল ইসলামের অনুমোদনে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে শারদীয়ায় হিজ মাস্টার্স ভয়েস রেকর্ডে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে কমলা ঝরিয়ার কণ্ঠে তুলসীদাস লাহিড়ীর সুরে দু-টি ভাটিয়ালি গান - 'ও বিদেশী বন্ধু' এবং 'যেথায় গেলে গাঙের চরে' অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত 'সাঁঝের তারকা আমি পথ হারায়ে' ও ' আমি ভোরের যূথিকা' গান দুটি যূথিকা রায়ের কণ্ঠে সমান জনপ্রিয়তা পায়। এতে যূথিকা রায় যেমন জনপ্রিয় শিল্পী হিসাবে পরিচিতি পান, তেমনি গীতিকার হিসাবে প্রণব রায়ও খ্যাতি অর্জন করেন। সহজ কথায় হালকা ছন্দে যে-কোন ভাব বা অনুভূতিকে প্রকাশ করার তার বিশেষ ক্ষমতা ছিল। দীর্ঘ চল্লিশ বছরে তিনি দু-হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। [] বাংলা আধুনিক গানের সাথে ছায়াছবির জন্যও গান লিখেছেন। ছবির পরিবেশের সাথে সাযুজ্য রেখে কাব্যগুণসমন্বিত গান রচনা করতেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে 'পণ্ডিত মশাই' ছায়াছবিতে প্রথম গান রচনা করেন এবং এটি কমল দাশগুপ্তের সুরে ভবানী দাস কণ্ঠ দিয়েছেন। এর সাথে তিনি যে গল্পগীতি গুলি রচনা করেছেন সেগুলির প্রতি ছন্দে জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি ধরা পড়ে। জগন্ময় মিত্রের কণ্ঠে তার লেখা 'চিঠি' ও 'সাতটি বছর আগে পরে' ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত গানের কয়েকটি উল্লেখকরা হল। যেমন-

আধুনিক বাংলা গান -

  • 'সাঁঝের তারকা আমি পথ হারায়ে'
  • 'মধুর আমার মায়ের হাসি'
  • 'খেলাঘর মোর ভেসে গেছে হায় নয়নের যমুনায়'
  • 'এক হাতে মোর পূজার থালা, আরেক হাতে মালা'
  • 'আমার সোনা চাঁদের কণা'
  • 'কতদিন দেখিনি তোমায়'
  • 'নাই বা ঘুমালে প্রিয়,রজনী এখন বাকি'
  • 'আর ডেক না সেই মধুনামে যাবার লগনে'
  • 'তুমি কি এখন দেখিছ স্বপন, আমারে'
  • 'বলেছিলে তাই চিঠি লিখে যাই'
  • 'তীর বেঁধা পাখী আর গাইবে না গান'
  • 'এমনি বরষা ছিল সেদিন'
  • 'মনের দুয়ার খুলে কে গো তুমি এলে'
  • 'মধুমালতী ডাকে আয়'
  • 'নাই বা পরিলে আজ মালা চন্দন'


ছায়াছবিতে ব্যবহৃত গান -

  • 'হৃদয় আমার সুন্দর তব পায়’ (সাগরিকা)
  • 'আঁধার মনের দিগন্তে আজ আলো' (নায়িকার ভূমিকায়)
  • 'এই ফাগুনে ডাক দিলে কে' (নায়িকার ভূমিকায়)
  • 'আমি আপন করিয়া চাহিনি' (মেঘ কালো)
  • 'এই কি গো শেষ দান? বিরহ দিয়ে গেলে' (গরমিল)
  • 'যখন রব না আমি দিন হলে অবসান' (পরিচয়)
  • 'প্রভুজী, প্রভুজী, প্রভুজী তুমি দাও দরশন' (পিতাপুত্র)
  • 'নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে’(পৃথিবী আমারে চায়)
  • 'চম্পা চামেলি গোলাপেরই বাগে’,(এন্টনি ফিরিঙ্গী)
  • 'আমি বনফুল ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে' (শেষ উত্তর)
  • 'আমি চান্দের সাম্পান যদি পাই' (দ্বীপের নাম টিয়ারং)

প্রণব রায় শুধু গীতিকারই ছিলেন না। বহুমুখী প্রতিভার মানুষ ছিলেন তিনি। চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার হিসাবে কয়েকটি কথাচিত্রের কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও জহর রায় অভিনীত বিখ্যাত কমেডি 'ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট' এর কাহিনী প্রণব রায় রচনা করেন। [] আবার পরিচালক হিসাবে তার প্রথম ছবি 'রাঙামাটি'১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তার রচিত কিছু গোয়েন্দা কাহিনিও আছে। [] গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার প্রণব রায়ের সাংবাদিক হিসাবেও আরেকটা পরিচয় ছিল। ‘বসুমতী’ পত্রিকায় প্রায় এক বছর বার্তা সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী পত্রিকা ‘নাগরিক’-এর সম্পাদনাও করতেন তিনি।

জীবনাবসান

[সম্পাদনা]

বাংলা সংস্কৃতি জগতের প্রতিভাধর গীতিকার প্রণব রায় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই আগস্ট কলকাতায় প্রয়াত হন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "গীতিকার প্রণব রায়ের প্রয়াণবার্ষিকীতে সশ্রদ্ধ প্রণাম"। ২০২০-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৫ 
  2. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৪০৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬