Svoboda | Graniru | BBC Russia | Golosameriki | Facebook
Transfiguration pending
বিষয়বস্তুতে চলুন

বিভূতিভূষণ সরকার (বিপ্লবী ও সমাজসেবী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিপ্লবী

বিভূতিভূষণ সরকার
বিভূতিভূষণ সরকার
জন্ম(১৯১৫-১২-১১)১১ ডিসেম্বর ১৯১৫
ভুঁয়েড়া গ্রাম, পুরশুড়া হুগলি ব্রিটিশ ভারত বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মৃত্যু১৯ জুলাই ১৯৮৮(1988-07-19) (বয়স ৭২)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯১৫ - ১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭ - ১৯৮৮)
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন
দাম্পত্য সঙ্গীপ্রমীলা সরকার
সন্তানস্বামী অসীমানন্দ সহ সাত পুত্র

বিভূতিভূষণ সরকার (১১ ডিসেম্বর ১৯১৫ - ১৯ জুলাই ১৯৮৮) ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং সমাজসেবী। আরামবাগের গান্ধী নামে খ্যাত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতা, পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের বিশ্বস্ত সেনাপতিদের অন্যতম ছিলেন তিনি। [১]

জীবনী

[সম্পাদনা]

বিভূতিভূষণ সরকারের জন্ম ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার পুরশুড়ার ভুঁয়েড়া গ্রামে। যতীন্দ্রনাথ সরকার ও শৈলবালা দেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। ছোটবেলাতেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। সেকারণে স্কুলের পড়াশোনার পর তার লেখাপড়া আর এগোয়নি। একসময় তিনি জাতীয় কংগ্রেসের গান্ধীবাদি নেতা প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সান্নিধ্যে আসেন। তার সঙ্গে 'সত্যাগ্রহ' ও 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তবে চরমপন্থী ধারার মানুষ ছিলেন তিনি। ১৯৩০-এর দশকে ঘাটাল থানার দারোগা ইংরেজ শাসকের তাবেদার হিসাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। বিভূতিভূষণের উপর ভার পড়েছিল তাকে শাস্তি দেওয়ার। বিভূতিভূষণ ঘাটাল বাজারে তাকে চরম শাস্তি দিয়েছিলেন। ধরা পড়ে দীর্ঘদিন তাকে হাজতবাস করতে হয়। এই সময় তার হাতের প্রতিটি আঙুলে সূচ ফুটিয়ে অত্যাচার চালানো হয়। ফলে শেষ জীবনে তার সব আঙুলই অকেজো হয়ে যায়।[১] ১৯৪০-৪১ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু দলীয় কর্মসূচীতে একবার পুরশুড়া আসেন। সেখান থেকে চন্দ্রকোনার কালিকাপুরে যেতে তিনি বিভূতিভূষণের সঙ্গে হাতির পিঠে চেপে যান। স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে বিভূতিভূষণকে আরামবাগ ও চুঁচুড়া জেলে বহুদিন কাটাতে হয়। প্রফুল্লচন্দ্র সেন বড়ডোঙ্গলে 'সাগরকুঠি' নির্মাণ করে একদিকে সমাজসেবা অন্যদিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজ চালালেও, সেসময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল ঘাঁটি ছিল শ্রীমন্তপুরে বিভূতিভূষণের শ্যালিকার বাড়ির গোয়ালঘরের দোতলায়। সেখান থেকেই প্রফুল্লচন্দ্র সেন সংগ্রামের যে কাজ পরিচালনা করতেন, তার বিশ্বস্ত সেনাপতিই ছিলেন বিভূতিভূষণ।

স্বাধীনতালাভের পর স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষিত বহু ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিভূতিভূষণ রাজনীতি থেকে সরে আসেন এবং পুরোপুরি সমাজসেবায় নিয়োজিত হন। জীবনের শেষ অধ্যায় কাটান নিজের কামারপুকুরের বাড়িতে। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ পন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মতাদর্শে বিশ্বাসী হন। সমাজসেবার কাজে স্থানীয় মানুষের কল্যাণে তিনি যে কাজ শুরু করেছিলেন, তার উত্তরসূরিরা চালিয়ে যাচ্ছেন তার নামে গঠিত ট্রাস্ট-'বিভূতিভূষণ সরকার সেবা প্রতিষ্ঠান' এর মাধ্যমে। তার নামে ভুঁয়েড়া গ্রামে রয়েছে এক দাতব্য চিকিৎসালয়, অবৈতনিক শিক্ষাকেন্দ্র ও অনাথ আশ্রম। [১]

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বিভূতিভূষণকে ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক প্রদত্ত তাম্রপত্র

স্বাধীনতার পঁচিশ বৎসর পূর্তিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তাকে 'তাম্রপত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী পুরস্কার' দিয়ে সম্মানিত করেন।

জীবনাবসান

[সম্পাদনা]

বিভূতিভূষণ সরকার প্রমিলা দেবীকে বিবাহ করেন। তাদের সাত সন্তানদের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান নবকুমার সরকার ওরফে স্বামী অসীমানন্দ[২] স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শুভানুধ্যায়ী বিভূতিভূষণ সরকার ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই কামারপুকুরে প্রয়াত হন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর বিভূতিভূষণ সরকার সেবা পরিষদের আয়োজনে তার জন্মস্থান হুগলি জেলার ভুঁয়েড়া গ্রামে উদ্যাপিত হয় তিন দিন ব্যাপী জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান নানা সেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "স্ত্রী প্রমিলা দেবী এখনও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পান নেতাজির সঙ্গে হাতির পিঠে যাচ্ছেন বিভূতিভূষণ" (পিডিএফ)আর্থিক লিপি,কলকাতা। ২০১৫-০৮-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৪ 
  2. "মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফোন অসীমানন্দের"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৬