^প্রশ্নটি অলঙ্কৃত, পরোক্ষভাবে: "ঐ জায়গা যেখানে আমার মাতৃভূমি অবস্থিত"।
^ ১৯৯৭-এর আগ পর্যন্ত স্লোভাকিয়ার সাথে মিলিত ভাবে কোড ৪২ ব্যবহৃত হত ।
^ অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের মতো .ইইউও ব্যবহৃত
চেক প্রজাতন্ত্র,[ক][১২](সংক্ষিপ্ত নাম চেকিয়া[খ][১৩] এবং ঐতিহাসিকভাবে বোহেমিয়া নামে পরিচিত[১৪]) মধ্য ইউরোপের একটি ভূবেষ্টিত রাষ্ট্র। দেশটির দক্ষিণে অস্ট্রিয়া, পশ্চিমে জার্মানি, উত্তর-পূর্বে পোল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্বে স্লোভাকিয়া অবস্থিত। চেক প্রজাতন্ত্র দেশটিতে রয়েছে পাহাড়ি ভূমি যা প্রায় ৭৮,৮৭১ বর্গকিলোমিটার (৩০,৪৫২ বর্গমাইল) অঞ্চলে বিস্তৃত এবং এর অধিকাংশেই নাতিশীতোষ্ণ মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় জলবায়ু বিদ্যমান। দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম প্রাগ। অন্যান্য শহরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বার্নো ও অস্ত্রাভা।
নবম শতাব্দীর শেষের দিকে মোরাভিয়ার অধীনে বোহেমিয়ার ডাচি প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্বে ১০০২ সালে রোমান সাম্রাজ্যের একটি ইম্পেরিয়াল রাজ্য হিসাবে এটি স্বীকৃত হয়েছিলো এবং ১১৯৮ সালে এটি একটি রাজ্যে পরিণত হয়।[১৫][১৬] ১৫২৬ সালে মোহাচের যুদ্ধের পর, বোহেমিয়ার পুরো সাম্রাজ্যটি ধীরে ধীরে হাবসবার্গ রাজতন্ত্রের সাথে একীভূত হয়। এসময় প্রোটেস্ট্যান্ট বোহেমিয়ান বিদ্রোহ ত্রিশ বছরব্যাপী হোয়াইট মাউন্টেনের যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। যুদ্ধের পর হাবসবার্গরা তাদের শাসনকে সুসংহত করে। ১৮০৬ সালে রোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তির সাথে সাথে এসব ভূমি অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে, চেক ভূমি আরও শিল্পোন্নত হয়ে ওঠে এবং ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির পতনের পরে এর বেশিরভাগ অংশ প্রথম চেকোস্লোভাক প্রজাতন্ত্রের অংশ হয়ে ওঠে।[১৭] চেকোস্লোভাকিয়া মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের একমাত্র দেশ ছিল যা আন্তঃযুদ্ধকালীন সময়কালে সংসদীয় গণতন্ত্র বজায় রেখেছিল।[১৮] ১৯৩৮ সালের মিউনিখ চুক্তির পর নাৎসি জার্মানি পদ্ধতিগতভাবে চেক ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৯৪৫ সালে চেকোস্লোভাকিয়া পুনরুদ্ধার করা হয় এবং ১৯৪৮ সালে একটি অভ্যুত্থানের পরে এটি পূর্ব ব্লকেরকমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সরকার ও অর্থনীতির উদারীকরণের প্রচেষ্টা ১৯৬৮ সালের প্রাগ বসন্তের সময় সোভিয়েত-নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের মাধ্যমে দমন করা হয়। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের মখমল বিপ্লব দেশে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটায়। ১ জানুয়ারি ১৯৯৩ তারিখে চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে যায় এবং এর সাংবিধানিক রাজ্যগুলি চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
প্রথাগত ইংরেজি নাম বোহেমিয়া শব্দটি ল্যাটিনবয়োহেমাম (লাতিন: Boiohaemum) থেকে এসেছে যার অর্থ বোইই (Boii;গ্যালিক উপজাতি) দের বাড়ি। বর্তমান ইংরেজী নামটি (Czech) এই অঞ্চলের সাথে যুক্ত পোলিশ নৃবিজ্ঞান থেকে এসেছে, যা শেষ পর্যন্ত এসেছে চেক ভাষার শব্দ চেক(Čech) থেকে।[১৯][২০][২১] নামটি এসেছে স্লেভিয় উপজাতি চেক: Češi, Čechové) থেকে এবং কথিত আছে তাদের নেতা চেক (Čech) এর নাম থেকে এই নামের উৎপত্তি, যিনি রিপ মাউন্টেনে(Říp Mountain) বসতি স্থাপনের জন্য তাদের বোহেমিয়াতে নিয়ে আসেন। Čech শব্দটির ব্যুৎপত্তি খুঁজে পাওয়া যায় প্রোটো-স্লেভীয় মূলশব্দ *čel- এ, যার অর্থ "জনগণের সদস্য(kinsman)", এইভাবে এটি চেক শব্দ člověk(একজন ব্যক্তি) এর অনুরূপ উৎপত্তি বহন করে।[২২]
ঐতিহ্যগতভাবে দেশটি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিলো: পশ্চিমে বোহেমিয়া(Čechy), পূর্বে মোরাভিয়া(Morava) এবং উত্তর-পূর্বে চেক সিলেসিয়া (Slezsko; ঐতিহাসিক সিলেসিয়ার ক্ষুদ্র , দক্ষিণ-পূর্ব অংশ যার অধিকাংশই এখন পোল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত)।[২৩] দেশটি ১৪শ শতাব্দী থেকে বোহেমিয় সাম্রাজ্যের ভূমি নামে পরিচিত ছিলো। এছাড়াও বিভিন্ন সময় এটি অন্য নামেও পরিচিত ছিলো, যেমন: চেক/বোহেমিয় ভূমি, বোহেমিয় সাম্রাজ্য, চেকিয়া,[২৪] সেন্ট ওয়েনচেসলাস সাম্রাজ্যের ভূমি। ১৯১৮ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর যখন দেশটি তার স্বাধীনতা ফিরে পায় তখন একই দেশে চেক ও স্লোভাক জাতির মিলনকে প্রতিফলিত করার জন্য দেশটির নাম রাখা হয় চেকোস্লোভাকিয়া।[২৫]
১৯৯২ সালে চেকোস্লোভাকিয়া বিলুপ্ত হওয়ার পর চেকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে চেকিয়া সুপারিশ করে।[২৬] এই রূপ তখন গৃহীত না হওয়ায় দীর্ঘ নাম চেক প্রজাতন্ত্র সমস্ত পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হতে থাকে। ২০১৬ সালে চেক সরকার দাপ্তরিক সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে চেকিয়া নাম অনুমোদন করে।[২৭] সংক্ষিপ্ত নামটি জাতিসংঘ কর্তৃক তালিকাভুক্ত হয়েছে[২৮] এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন,[২৯]সিআইএ[৩০] এবং গুগল ম্যাপসের[৩১] মতো অন্যান্য সংস্থা দ্বারাও এটি ব্যবহৃত হয়।
চেক প্রজাতন্ত্র মূলত ৪৮° উত্তর থেকে ৫১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ১২° পূর্ব থেকে ১৯° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
দেশটির পশ্চিমদিকের অংশ বোহেমিয়া এলবে ও ভলতাভা নদীর অববাহিকার সমন্বয়ে গঠিত, যা নিচু পর্বতমালা যেমন, সুদেতের ক্রোকনোস অংশ দ্বারা বেষ্টিত। দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ১,৬০৩ মি (৫,২৫৯ ফু) উচ্চতার স্নেজকা (Sněžka) এখানে অবস্থিত। পূর্বদিকের অংশ মোরাভিয়াও পাহাড়ি। এর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে মোরাভা নদী। এছাড়া ওডার (চেক: Odra) নদীর উৎপত্তিও এখানে।
চেক প্রজাতন্ত্রের পানি তিনটি ভিন্ন সাগরে প্রবাহিত হয়: উত্তর সাগর, বাল্টিক সাগর এবং কৃষ্ণ সাগর। চেক প্রজাতন্ত্র হামবুর্গ ডকের মাঝখানে ৩০,০০০-বর্গমিটার (৭.৪ একর) আকারের ভূমি মোলদাউহাফেন ইজারা দেয়। এটি ভার্সাই চুক্তির অনুচ্ছেদ ৩৬৩ দ্বারা চেকোস্লোভাকিয়াকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল, যাতে ভূমিবেষ্টিত দেশটি সমুদ্রগামী জাহাজে তাদের পণ্য স্থানান্তরিত করতে পারে। অঞ্চলটি ২০২৮ সালে জার্মানির কাছে ফেরত আসবে।
উদ্ভিদ-ভৌগোলিকভাবে, চেক প্রজাতন্ত্র বোরিয়াল রাজ্যের অন্তর্গত সার্কামবোরিয়াল অঞ্চলের মধ্য ইউরোপীয় প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার এর তথ্যমতে, চেক প্রজাতন্ত্রের এলাকাটি চারটি বাস্তু অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়: পশ্চিম ইউরোপীয় প্রশস্তপত্র বন, মধ্য ইউরোপীয় মিশ্র বন, প্যানোনীয় মিশ্র বন, কার্পাথীয় মন্টেন কনিফার বন।[৩২]
চেক প্রজাতন্ত্রের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ ধরনের। উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং ঠাণ্ডা, মেঘলা ও তুষারময় শীতকালবিশিষ্ট এ দেশের জলবায়ু মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যবর্তী পর্যায়ে অবস্থিত। দেশটির স্থলবেষ্টিত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে গ্রীষ্ম ও শীতকালের তাপমাত্রার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।[৩৩]
জানুয়ারি বছরের শীতলতম মাস; এর পরেই রয়েছে ফেব্রুয়ারি ও ডিসেম্বর। এসময় পাহাড়ে এবং মাঝেমধ্যে শহর ও নিম্নভূমিতেও তুষারপাত হয়। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের দিকে তাপমাত্রা সাধারণত বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে এপ্রিল মাসে দিনের তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বসন্তে বরফ গলে গিয়ে নদীর পানির উচ্চতা বাড়িয়ে তোলে।
বছরের উষ্ণতম মাস হচ্ছে জুলাই; এর পরেই রয়েছে আগস্ট ও জুন। গ্রীষ্মকালের গড় তাপমাত্রা শীতকালের তুলনায় প্রায় ২০–৩০ °সে (৬৮–৮৬ °ফা) বেশি। এছাড়া গ্রীষ্মকালে ঝড় ও বৃষ্টি দেখা যায়। উষ্ণ এবং শুষ্ক শরৎকাল সাধারণত সেপ্টেম্বরে শুরু হয়। অক্টোবরে, তাপমাত্রা ১৫ °সে (৫৯ °ফা) বা ১০ °সে (৫০ °ফা) এর নিচে নেমে যায় এবং পর্ণমোচী গাছের পাতা ঝরে পড়া শুরু হয়। নভেম্বরের শেষের দিকে তাপমাত্রা সাধারণত হিমাঙ্কের কাছাকাছি থাকে।
এখানে সর্বকালের শীতলতম তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছিলো ১৯২৯ সালে চেসকে বুদেইয়োভিসের কাছে লিতভিনোভিসে অঞ্চলে −৪২.২ °সে (−৪৪.০ °ফা) এবং উষ্ণতম তাপমাত্রা ২০১২ সালে দোব্রিখোভিসে অঞ্চলে ৪০.৪ °সে (১০৪.৭ °ফা)।[৩৪]
বছরের বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালে হয়। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত যদিও সারাবছর ধরে চলে (প্রাগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে গড়ে প্রায় ১২ দিন কমপক্ষে ০.১ মিমি (০.০০৩৯ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়, নভেম্বরে যা দাঁড়ায় প্রায় ১৬ দিনে)। কিন্তু ভারী বৃষ্টিপাত (দিনে ১০ মিমি (০.৩৯ ইঞ্চি) এর বেশি) সাধারণত মে থেকে আগস্ট মাসে বেশি দেখা যায় (প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দুই দিন)।[৩৫] মাঝেমধ্যে তীব্র বজ্রপাত, বাতাস, শিলাবৃষ্টি ও টর্নেডো তৈরি হয়, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে।[৩৬][৩৭]
২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী পরিবেশগত অগ্রগতি সূচকে (EPI) চেক প্রজাতন্ত্র বিশ্বের ২০তম দেশ (কানাডা ও ইতালির সাথে যৌথভাবে)।[৩৮] ২০১৮ সালের ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ ইন্টেগ্রিটি সুচকে ১.৭১/১০ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১৭২টি দেশের মধ্যে এর অবস্থান ছিলো ১৬০তম।[৩৯] চেক প্রজাতন্ত্রে চারটি জাতীয় উদ্যান (বোহেমিয় সুইজারল্যান্ড জাতীয় উদ্যান, প্রদিয়ি জাতীয় উদ্যান, শুমাভা জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত ল্যান্ডস্কেপ, কারকোনোশ জাতীয় উদ্যান)[৪০] এবং ২৫টি সংরক্ষিত ল্যান্ডস্কেপ এলাকা[৪১] বিদ্যমান।
বামে: ভেনাস অব দোলনি ভেস্তোনিসে; সময়কাল ২৯,০০০-২৫,০০০ খ্রিস্টপূর্ব ডানে: একজন কেল্টের পাথুরে মাথা[৪২]
প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক মানব বসতির প্রমাণ পেয়েছেন, যা পুরা প্রস্তর যুগের।
ধ্রুপদী যুগে, খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীর সেল্টিকঅভিবাসনের ফলে বোহেমিয়া অঞ্চল বোইয়ের সাথে সংযুক্ত হয়।[৪৩] বোইরা আধুনিক প্রাগের কাছে একটি ক্ষুদ্র বসতির প্রতিষ্ঠা করেছিলো।[৪৪] পরবর্তীতে খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে মার্কোমানি ও কাদির জার্মান উপজাতিরা সেখানে বসতি স্থাপন করে।[৪৫]
কৃষ্ণ সাগর-কার্পেথীয় অঞ্চলের স্লাভরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। সাইবেরিয়া ও পূর্ব ইউরোপের হুন, আভার, বুলগার ও হাঙ্গেরীয় লোকজন[৪৬] কর্তৃক তাদের ভূমিতে আগ্রাসন তাদের অভিবাসনকে ত্বরান্বিত করে।[৪৭] ৬ষ্ট শতাব্দীতে হুনরা পশ্চিমদিকে বোহেমিয়া, মোরাভিয়া এবং বর্তমান অস্ট্রিয়া ও জার্মানির দিকে সরে যায়।[৪৬]
৭ম শতাব্দীতে ফ্রাঙ্ক বণিক সামো, আভারদের বিরুদ্ধে লড়াইরত স্লাভদের সমর্থন করে[৪৮] এবং সামো সাম্রাজ্যের শাসক হয়ে ওঠে। এটি মধ্য ইউরোপের প্রথম নথিভুক্ত স্লাভিক রাজ্য। ৮ম শতাব্দীতে মোইমির রাজবংশ নিয়ন্ত্রিত মোরাভিয়া রাজত্বের উত্থান ঘটে।[৪৯] ৯ম শতাব্দীতে মোরাভিয়ার প্রথম স্বাতপ্লুকের সময় এটি শীর্ষে ওঠে। তখন পর্যন্ত এটি ফ্রাঙ্গদের প্রভাবমুক্ত ছিলো। সিরিল ও মেথোডিয়াসের বাইজেন্টাইন অভিযানের মাধ্যমে মোরাভিয়ায় খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারিত হয়। তারা পুরাতন স্লাভনিয় ভাষা (স্লাভদের সাহিত্যিক ও ধর্মীয়ভাবে ব্যবহৃত প্রথম ভাষা) ও গ্লাটোলিয় লিপি কোড করে।[৫০]
নবম শতাব্দীর শেষভাগে পেমিস্লিভ রাজবংশের মাধ্যমে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে বোহেমিয়ার ডাচি আবির্ভূত হয়। বোহেমিয়া ১০০২ থেকে ১৮০৬ সাল পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের একটি ইম্পেরিয়াল রাজ্য ছিল।[৫১]
১২১২ সালে প্রথম রোমিসল অটোকার সম্রাটের কাছ থেকে সিসিলির গোল্ডেন বুল মুক্ত করেন এবং বোহেমিয়ার ডাচিকে একটি রাজ্যে উন্নীত করা হয়।[৫২] ত্রয়োদশ শতাব্দীতে জার্মান অভিবাসীরা বোহেমিয়ার সীমানায় বসতি স্থাপন করে।[৫৩] ইউরোপ আক্রমণের সময় মঙ্গোলরা মোরাভিয়াতেও আক্রমণ চালিয়েছিলো, কিন্তু অলোমুস নামক স্থানে এসে তারা পরাজিত হয়।[৫৪]
একের পর এক সাম্রাজ্যের লড়াই শেষে লুক্সেমবার্গ হাউজ বোহেমিয়ার সিংহাসন লাভ করে।[৫৫]
বোহেমিয়ায় গির্জা সংস্কারের প্রচেষ্টা চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে শুরু হয়। ইয়ান হুসের অনুসারীরা রোমান চার্চ থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং হুসাইট যুদ্ধে (১৪১৯-১৪৩৪) সিগিসমান্ড কর্তৃক সংগঠিত পাঁচটি ক্রুসেডকে দমন করে। পরবর্তী দুই শতাব্দীব্যাপী, বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে হুসাইট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। শান্তিবাদী চিন্তাবিদ পেট্রা সেলশিস্কি, মোরাভিয়ান ভাইদের আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন (১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে) যা রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে গিয়েছিলো।[৫৬]
১৪২১ সালের ২১ শে ডিসেম্বর তারিখে সামরিক কমান্ডার এবং বেতনভুক্ত সৈনিক ইয়ান জিজ্কা, কুতনা হোরার যুদ্ধে তার বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন, যার ফলে হুসাইটদের বিজয় ঘটে। তিনি আজ জাতীয় বীর হিসেবে সম্মানিত।
১৫২৬ সালের পরে বোহেমিয়া হাবসবার্গের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। হাবসবার্গরা প্রথমে নির্বাচিত এবং পরে ১৬২৭ সালে বোহেমিয়ার বংশগত শাসক হয়ে ওঠে। ১৫৮৩ থেকে ১৬১১ সালের মধ্যে প্রাগ ছিল রোমান সম্রাট দ্বিতীয় রুডলফ এবং তার দরবারের সরকারি আসন।
প্রাগের প্রতিরক্ষা এবং পরবর্তীতে ১৬১৮ সালের হাবসবার্গের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, 'ত্রিশ বছরের যুদ্ধ' এর সূচনা করে। ১৬২০ সালে হোয়াইট মাউন্টেনের যুদ্ধে বোহেমিয়ার বিদ্রোহ দমন হয়। ফলে বোহেমিয়া এবং অস্ট্রিয়ায় অবস্থিত হাবসবার্গের বংশগত ভূমির মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার হয়। ১৬২১ সালে বোহেমিয়া বিদ্রোহের নেতাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। আভিজাত্য এবং মধ্যবিত্ত প্রোটেস্ট্যান্টদের হয় ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছিলো অথবা দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিলো।[৫৭]
১৬২০ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগের "অন্ধকার যুগে" প্রটেস্ট্যান্টদের বহিষ্কারের পাশাপাশি যুদ্ধ, রোগ ও দুর্ভিক্ষের কারণে চেক ভূখণ্ডের জনসংখ্যা এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়।[৫৮] হাবসবার্গরা ক্যাথলিক ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত খ্রিস্টান মতবাদ নিষিদ্ধ করেছিলো।[৫৯] বারোক সংস্কৃতির সমৃদ্ধি এই ঐতিহাসিক সময়ের অস্পষ্টতা প্রদর্শন করে। উসমানীয় তুর্কি ও তাতাররা ১৬৬৩ সালে মোরাভিয়া আক্রমণ করে।[৬০] ১৬৭৯-১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে চেক ভূখন্ড ভিয়েনার গ্রেট প্লেগ এবং সার্ফদের অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়।[৬১]
দুর্ভিক্ষের কারণে কৃষক বিদ্রোহ দানা বেধে ওঠে।[৬২] ১৭৮১ থেকে ১৮৪৮ সালের মধ্যে ভূমিদাসত্ব বিলুপ্ত করা হয়। নেপলীয় যুদ্ধের বেশ কয়েকটি লড়াই বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্র অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল।
১৮০৬ সালে রোমান সাম্রাজ্যের সমাপ্তির ফলে বোহেমিয়ার রাজনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে বোহেমিয়া রোমান সাম্রাজ্যের নির্বাচকমণ্ডলীতে তার অবস্থান এবং ইম্পেরিয়াল ডায়েটে তার নিজস্ব রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব হারিয়ে ফেলে।[৬৩] বোহেমিয়ান ভূখন্ড অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে চেকের জাতীয় পুনরুজ্জীবনের উত্থান শুরু হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল চেক ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচয়কে পুনরুজ্জীবিত করা। অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যে বোহেমিয়ান শাসনের উদার সংস্কার এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রাগের ১৮৪৮ সালের বিপ্লব ও সংগ্রাম দমন করা হয়।[৬৪]
প্রথমদিকে বোহেমিয়াকে কিছু ছাড় দেওয়া হবে মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত সম্রাট প্রথম ফ্রাঞ্জ জোসেফ শুধুমাত্র হাঙ্গেরির সাথে একটি সমঝোতায় আসেন। ১৮৬৭ সালের অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সমঝোতা এবং বোহেমিয়ার রাজা হিসাবে ফ্রাঞ্জ জোসেফের অনুপলব্ধ রাজ্যাভিষেক কিছু চেক রাজনীতিবিদের হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। [৬৪] বোহেমিয়া শাসনের ভূমিগুলি তথাকথিত সিসলেথানিয়ার অংশ হয়ে ওঠে।
চেক সামাজিক গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল রাজনীতিবিদরা সার্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেন। ১৯০৭ সালে সার্বজনীন পুরুষ ভোটাধিকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[৬৫]
১৯১৮ সালে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে হাবসবার্গ রাজতন্ত্রের পতনের সময়, টমাশ গেরিক মাসারিকের নেতৃত্বে চেকোস্লোভাকিয়ার স্বাধীন প্রজাতন্ত্র তৈরি করা হয়, যা বিজয়ী মিত্রশক্তিতে যোগ দিয়েছিলো।[৬৭] বোহেমিয়ান রাজত্বও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৬৮]
প্রথম চেকোস্লোভাক প্রজাতন্ত্রে প্রাক্তন অস্ট্রো-হাঙ্গেরির জনসংখ্যার মাত্র ২৭% অন্তর্ভুক্ত হলেও শিল্পকারখানার প্রায় ৮০% অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ফলে এর পশ্চিমা শিল্প রাজ্যগুলির সাথে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ ছিলো।[৬৬] ১৯১৩ সালের তুলনায় ১৯২৯ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ৫২% এবং শিল্প উৎপাদন ৪১% বৃদ্ধি পায়। ১৯৩৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়া বিশ্ব শিল্প উৎপাদনে ১০ম স্থান অধিকার করে।[৬৯] চেকোস্লোভাকিয়া মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের একমাত্র দেশ যা সমগ্র আন্তঃযুদ্ধের সময়কালে গণতন্ত্র বজায় রেখেছে।[৭০] যদিও প্রথম চেকোস্লোভাক প্রজাতন্ত্র একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ছিল, তবে এটি তার সংখ্যালঘুদের কিছু অধিকার প্রদান করেছিলো। সংখ্যালঘুদের মধ্যে বৃহত্তম জার্মান (১৯২১ সালে ২৩.৬%), হাঙ্গেরীয় (৫.৬%) এবং ইউক্রেনীয়রা (৩.৫%)।[৭১]
পশ্চিম চেকোস্লোভাকিয়া নাৎসি জার্মানিরা দখল করে। ফলে বেশিরভাগ অঞ্চল বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার প্রটেকটরেট এর অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রাগের উত্তরে চেক অঞ্চলের মধ্যে, টেরেজিন নামক স্থানে একটি নাৎসি বন্দিশিবির অবস্থিত ছিলো। প্রোটেক্টরেটের অন্তর্ভুক্ত ইহুদিদের বেশিরভাগ অংশকে নাৎসি-পরিচালিত বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিলো। নাৎসি জেনারেলপ্লান ওস্ট জার্মান জনগণের জন্য আরও বেশি বসবাস স্থান প্রদানের লক্ষ্যে বেশিরভাগ বা সমস্ত চেকদের নির্মূল, বহিষ্কার, জার্মানীকরণ বা দাসত্বের আহ্বান জানায়।[৭২] নাৎসি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে চেকোস্লোভাক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিলো। এর পাশাপাশি চেকোস্লোভাকদের নাৎসি-বিরোধী প্রতিরোধের জন্য তাদের বিরুদ্ধেও নাৎসিরা প্রতিশোধ নেয়। ১৯৪৫ সালের ৯ মে সোভিয়েত ও আমেরিকান সেনাবাহিনীর আগমন এবং প্রাগ বিদ্রোহের মাধ্যমে জার্মান দখলদারিত্বের অবসান ঘটে।[৭৩] চেকোস্লোভাকিয়ার বেশিরভাগ জার্মান-ভাষীকে দেশ থেকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হয়। প্রথমদিকে স্থানীয় সহিংসতার কারণে এবং পরবর্তীতে পোটসডাম সম্মেলনে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন কর্তৃক গঠিত "সংগঠিত স্থানান্তর" এর পৃষ্ঠপোষকতায় এটি করা হয়।[৭৪]
১৯৪৬ সালের নির্বাচনে, কমিউনিস্ট পার্টি ৩৮% ভোট লাভ করে এবং চেকোস্লোভাক পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল হয়ে ওঠে।[৭৫] এটি অন্যান্য দলগুলির সাথে একটি জোট গঠন করে এবং ক্ষমতা সংহত করে। ১৯৪৮ সালে একটি অভ্যুত্থান ঘটে এবং একটি এক-দলীয় সরকার গঠিত হয়। পরবর্তী ৪১ বছর ধরে, চেকোস্লোভাক কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটিতে পূর্ব ব্লকের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে।[৭৬] ১৯৬৮ সালের চেকোস্লোভাকিয়ায় ওয়ার'শ আক্রমণের মাধ্যমে প্রাগ বসন্ত রাজনৈতিক উদারীকরণ বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই আগ্রাসনের ফলে কমিউনিস্ট আন্দোলন ভেঙে যায়, যা শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯ সালের বিপ্লবের দিকে পরিচালিত হয়।
১৯৮৯ সালের নভেম্বরে মখমল বিপ্লবের মাধ্যমে চেকোস্লোভাকিয়া একটি উদার গণতন্ত্রে ফিরে আসে। ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি, দেশটি শান্তিপূর্ণভাবে চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়া নামক দুটি দেশে বিভক্ত হয়ে যায়। উভয় দেশই একটি বাজার অর্থনীতি তৈরির উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বেসরকারীকরণের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। প্রক্রিয়াটি সফল হয়েছিল; ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংক চেক প্রজাতন্ত্রকে "উন্নত দেশ" হিসাবে স্বীকৃতি দেয়[৭৭] এবং ২০০৯ সালে মানব উন্নয়ন সূচকে দেশটি "সমুন্নত মানব উন্নয়ন" এর জাতি হিসেবে স্থান লাভ করে।[৭৮]
চেক প্রজাতন্ত্র ১৯৯১ সাল থেকে চেকোস্লোভাকিয়ার অংশ হিসেবে এবং ১৯৯৩ সাল থেকে তার নিজস্ব অধিকারে, ভিসেগ্রাদ গ্রুপ এর সদস্য ছিলো। ১৯৯৫ সাল থেকে এটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ও.ই.সি.ডি) এর সদস্য। দেশটি ১৯ সালের ১২ মার্চ ন্যাটোতে এবং ২০০৪ সালের ১ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে। ২০০৭ সালের ২১ শে ডিসেম্বর চেক প্রজাতন্ত্র শেঙেন এরিয়াতে যোগদান করে।
২০১৭ সাল নাগাদ, চেক সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও সিভিক ডেমোক্রেটিক পার্টি পর্যায়ক্রমে চেক প্রজাতন্ত্রের সরকারগুলোর নেতৃত্ব দেয়। ২০১৭ এর অক্টোবরে দেশের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি আন্দ্রেয়ি বাবিশের নেতৃত্বে এএনও ২০১১ দল তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, সিভিক ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ে তিনগুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে।[৭৯] ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চেক প্রেসিডেন্ট মিলোশ জেমান আন্দ্রেয়ি বাবিশকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।[৮০]
২০২১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনে পেট্রা ফিয়ালা নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি স্পোলু জোট এবং পাইরেটস অ্যান্ড মেয়রস জোটের মেলবন্ধনে একটি সরকারি জোট গঠন করেন। জোটটি বাবিসের নেতৃত্বাধীন এএনও দলকে সংকীর্ণভাবে পরাজিত করে।[৮১]
চেক প্রজাতন্ত্র একটি বহুত্ববাদী বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। দেশটির সংসদ (Parlament České republiky) দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট; চেম্বার অব ডেপুটিজ (চেক: Poslanecká sněmovna, ২০০ জন সদস্য) এবং সিনেট (চেক: Senát, ৮১ জন সদস্য)।[৮২] চেম্বার অফ ডেপুটিজ এর সদস্যরা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে (৫% নির্বাচনী সীমা) চার বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন। এখানে ১৪টি নির্বাচনী জেলা রয়েছে, যা দেশের প্রশাসনিক অঞ্চলের অনুরূপ। চেক ন্যাশনাল কাউন্সিল এর উত্তরসূরী হচ্ছে চেম্বার অব ডেপুটিজ। প্রাক্তন চেকোস্লোভাকিয়ার বর্তমানে বিলুপ্ত ফেডারেল পার্লামেন্টের সব ক্ষমতা এবং দায়িত্ব এর রয়েছে। সিনেটের সদস্যরা একক-আসনের নির্বাচনী এলাকায় ছয় বছরের মেয়াদ দুই-ধাপের রানঅফ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নির্বাচিত হন প্রতি জোড় বছরের শরৎকালে। ব্যবস্থাটি মার্কিন সিনেটের আদলে তৈরি করা হয়েছে, তবে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা প্রায় সমান আকারের এবং ব্যবহৃত ভোটিং সিস্টেমটি একটি দুই-ধাপের রানঅফ।
রাষ্ট্রপতি সীমিত এবং নির্দিষ্ট ক্ষমতাবিশিষ্ট একজন আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুসারে মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের নিযুক্ত করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান নিয়মে, চেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের মেয়াদে সংসদের একটি যৌথ অধিবেশন দ্বারা নির্বাচিত হন এবং পরপর দুইবারের (ভাস্লাভ হাভেল দুইবার, ভাস্লাভ ক্লাউস দুইবার) চেয়ে বেশি নির্বাচিত হতে পারেন না। ২০১৩ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি সংঘটিত হয়।[৮৩] কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সরাসরি নির্বাচন প্রবর্তনের সাথে সাথে চেক প্রজাতন্ত্র সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে গিয়ে একটি আধা-রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার দিকে চলে গেছে।[৮৪] সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা সংবিধান থেকে উদ্ভূত। সরকারের সদস্য হলেন প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীগণ। সরকার চেম্বার অফ ডেপুটিজ এর কাছে দায়বদ্ধ।[৮৫] প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান। বেশিরভাগ বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণ এবং সরকারী মন্ত্রী নির্বাচন করার ক্ষমতা তার রয়েছে।[৮৬]
চেক প্রজাতন্ত্র একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র।[৮৭] এর দেওয়ানি আইন ব্যবস্থা, মহাদেশীয় ধরনের উপর ভিত্তি করে রচিত যা জার্মান আইনি সংস্কৃতি থেকে উদ্ভুত। আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি হল ১৯৯৩ সালে গৃহীত চেক প্রজাতন্ত্রের সংবিধান।[৮৮] ২০১০ সাল থেকে দণ্ডবিধি এবং ২০১৪ সাল থেকে একটি নতুন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হয়। আদালত ব্যবস্থায় জেলা, প্রশাসনিক বিভাগ (county) এবং সর্বোচ্চ আদালত (supreme court) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এটি দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং প্রশাসনিক শাখায় বিভক্ত। চেক বিচার বিভাগের রয়েছে তিনটি সর্বোচ্চ আদালত। সাংবিধানিক আদালত ১৫ জন সাংবিধানিক বিচারক নিয়ে গঠিত এবং আইনসভা বা সরকার কর্তৃক যেকোনো সংবিধান লঙ্ঘন তত্ত্বাবধান করে।[৮৮] সর্বোচ্চ আদালত ৬৭ জন বিচারক নিয়ে গঠিত এবং এটি চেক প্রজাতন্ত্রের বেশিরভাগ আইনী মামলার জন্য সর্বোচ্চ আপিলের আদালত। সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত প্রক্রিয়াগত এবং প্রশাসনিক আনুগত্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এর কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিষয়ের উপর এখতিয়ার রয়েছে। যেমন, রাজনৈতিক দল গঠন ও বন্ধ করা, সরকারী সংস্থাগুলির মধ্যে এখতিয়ারগত সীমানা এবং সরকারী অফিসের সদস্যপদে দাঁড়ানোর জন্য ব্যক্তির যোগ্যতা নির্ধারণ।[৮৮] সর্বোচ্চ আদালত, সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত এবং সর্বোচ্চ সরকারি অভিশংসকের (supreme public prosecutor) কার্যালয় বার্নোতে অবস্থিত।[৮৮]
চেক প্রজাতন্ত্র গত কয়েক দশক ধরে সবচেয়ে নিরাপদ বা সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থান পেয়েছে।[৮৯] এটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, ওইসিডি ও কাউন্সিল অব ইউরোপের সদস্য এবং অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস এর পর্যবেক্ষক।[৯০] চেক প্রজাতন্ত্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক যুক্ত বেশিরভাগ দেশের দূতাবাসগুলি প্রাগে অবস্থিত এবং কনস্যুলেটগুলি সারা দেশব্যাপী অবস্থিত।
চেক পাসপোর্ট ভিসায় সীমাবদ্ধ। ২০১৮ সালের হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স ভিসা সীমাবদ্ধতা সূচক অনুযায়ী, চেক নাগরিকদের ১৭৩ টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। এ সূচকে দেশটি মাল্টা এবং নিউজিল্যান্ডের[৯১] সাথে যৌথভাবে ৭ম স্থানে রয়েছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা চেক পাসপোর্টকে ২৪তম স্থান দিয়েছে।[৯২] মার্কিন ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম চেক নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য।
পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাথমিক ভূমিকা রয়েছে, যদিও এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির বিশেষ প্রভাব রয়েছে এবং বিদেশে তিনিই দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সদস্যপদ চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রীয় বিষয়। বৈদেশিক সম্পর্ক ও তথ্য অফিস (ইউজেডএসআই) গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিদেশী নীতি ব্রিফিংয়ের জন্য বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এটি বিদেশে চেক প্রজাতন্ত্রের দূতাবাসের সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।
অতীতের বিখ্যাত চেক কূটনীতিকদের মধ্যে ছিলেন শিনিজ ও টেত্তাউ এর কাউন্ট ফিলিপ কিনস্কি, শোয়ার্জেনবার্গের রাজকুমার কার্ল ফিলিপ, এডভার্দ বেনেস, ইয়ান মাসারিক, জিরি ডিয়েনস্টবিয়ার এবং রাজকুমার কারেল শোয়ার্জেনবার্গ।
চেক সশস্ত্র বাহিনী ভূমি বাহিনী, বিমান বাহিনী এবং বিশেষায়িত সহযোগী ইউনিট নিয়ে গঠিত। সশস্ত্র বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হয়। চেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ। ২০০৪ সালে সেনাবাহিনী নিজেদের একটি সম্পূর্ণ পেশাদার সংস্থায় রূপান্তরিত করে এবং বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা বিলুপ্ত করা হয়। দেশটি ১৯৯৯ সালের ১২ মার্চ থেকে ন্যাটোর সদস্য। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির প্রায় ১.২৮ শতাংশ (২০২১)।[৮৩] সশস্ত্র বাহিনী চেক প্রজাতন্ত্র এবং তার মিত্রদের রক্ষা করা, বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা স্বার্থ প্রচার করা এবং ন্যাটোতে অবদান রাখার দায়িত্ব পালন করে।
বর্তমানে, ন্যাটোর সদস্য হিসাবে চেক সামরিক বাহিনী রিসোলিউট সাপোর্ট এবং কেএফওআর অপারেশনে অংশ নিচ্ছে। আফগানিস্তান, মালি, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কসোভো, মিশর, ইসরায়েল এবং সোমালিয়ায় এর সেনা নিয়োজিত রয়েছে। চেক বিমান বাহিনী বাল্টিক রাষ্ট্র এবং আইসল্যান্ডেও কাজ করেছিল।[৮৫] চেক সামরিক বাহিনীর প্রধান সরঞ্জামগুলির মধ্যে রয়েছে জেএএস ৩৯ গ্রিপেন মাল্টি-রোল ফাইটারস, এরো এল-১৫৯ অ্যালকা যুদ্ধ বিমান, এমআই-৩৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যানবাহন (পান্ডুর দ্বিতীয়, ওটি-৬৪, ওটি-৯০, বিভিপি-২) এবং ট্যাংক (টি-৭২ এবং টি-৭২এম৪সিজেড)।
অতীতের বিখ্যাত চেক এবং চেকোস্লোভাক সেনা এবং সামরিক নেতারা হলেন ইয়ান জিজকা, আলব্রেখট ভন ওয়ালেনস্টাইন, কার্ল ফিলিপ, শোয়ার্জেনবার্গের রাজকুমার, জোসেফ রাডেস্কি ভন রাডেজ, জোসেফ রাডেটস্কি ভন রাডেটজ, জোসেফ শ্নেইদারেক, হেলিওডর পিকা, লুডভক স্ভোবোদা, জ্যান কুবিশ, যোসেফ গাবচিক ফ্রানটিশেক ফাইটল এবং পেট্রা পাভেল।
২০০০ সাল থেকে চেক প্রজাতন্ত্র তেরোটি অঞ্চলে (Czech: kraje, singular kraj) বিভক্ত। এছাড়া রয়েছে রাজধানী প্রাগ। প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব নির্বাচিত আঞ্চলিক পরিষদ এবং একটি আঞ্চলিক গভর্নর রয়েছে। প্রাগে পরিষদ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কার্যকর করা হয় সিটি কাউন্সিল এবং মেয়রের মাধ্যমে।
১৯৯৯ সালে একটি প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে তিনটি "সংবিধিবদ্ধ শহর" সহ (প্রাগ ব্যতীত, যার বিশেষ মর্যাদা ছিল) পুরানো ৭৬ টি জেলা (ওক্রেসি, একবচনে ওকরা) তাদের বেশিরভাগ গুরুত্ব হারিয়েছে। তারা আঞ্চলিক বিভাগ এবং রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার আসন হিসাবে রয়ে গেছে।[৮৭]
ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক একক হল ওবেক (পৌরসভা)। ২০২১ সালের হিসাবে, চেক প্রজাতন্ত্র ৬,২৫৪ টি পৌরসভায় বিভক্ত। শহর ও নগরীগুলোও পৌরসভা। প্রাগের রাজধানী শহর একইসাথে একটি অঞ্চল এবং পৌরসভা।
ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল এবং বর্তমান প্রশাসনিক অঞ্চলের সাথে চেক প্রজাতন্ত্রের মানচিত্র
চেক প্রজাতন্ত্রের পরিষেবা, উৎপাদন ও উদ্ভাবন ভিত্তিক একটি উন্নত,[৯৮] উচ্চ-আয়ের[৯৯] রপ্তানি-ভিত্তিক সামাজিক বাজার অর্থনীতি রয়েছে। এটি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র এবং এটি ইউরোপীয় সামাজিক মডেল বজায় রাখে।[১০০] চেক প্রজাতন্ত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ইউরোপীয় একক বাজারে অংশগ্রহণ করে এবং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির একটি অংশ। কিন্তু মুদ্রা হিসেবে এটি ইউরোর পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রা চেক কোরুনা ব্যবহার করে। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড় জিডিপির শতকরা ৯১ ভাগ[১০১] এবং দেশটি ওইসিডির সদস্য। চেক ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃক দেশটির মুদ্রানীতি পরিচালিত হয়, যার স্বাধীনতা সংবিধান দ্বারা নিশ্চিতকৃত। চেক প্রজাতন্ত্র জাতিসংঘেরঅসমতা-সামঞ্জস্যকৃত মানব উন্নয়ন সূচকে ১২শ এবং বিশ্বব্যাংকের মানব মূলধন সূচকে ২৪শ স্থানে রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা এটিকে "ইউরোপের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম" হিসেবে বর্ণনা করেছে।[১০২]কোভিড-১৯ মহামারী চেক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিলো। তবে অর্থনীতিবিদরা ২০২১ সালে ৩.৯ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৪.৩ শতাংশ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন।[১০৩]
২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ক্রয় ক্ষমতার সমতায় দেশের মাথাপিছু জিডিপি ৪০,৭৯৩ ডলার[১০৪] এবং ন্যুনতম মূল্যে ২২,৯৪২ ডলার।[১০৫] আলিয়াঞ্জ এ.জি. এর মতে, ২০১৮ সালে দেশটি একটি এমডব্লিউসি (গড় সম্পদ দেশ) ছিল, যা নিট আর্থিক সম্পদের ক্ষেত্রে ২৬ তম স্থান অর্জন করেছিলো।[১০৬] ২০১৭ সালে দেশটি ৪.৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।[১০৭] ২০১৬ সালের বেকারত্বের হার ছিলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সর্বনিম্ন (২.৪ শতাংশ)[১০৮] এবং ২০১৬ সালের দারিদ্র্যের হার ছিল ওইসিডি সদস্যদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।[১০৯] চেক প্রজাতন্ত্র ২০২১ সালের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ২৭শ,[১১০] ২০১৬ সালের গ্লোবাল ইনোভেশন সূচকে ২৪শ,[১১১]গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্টে ২৯শ,[১১২]ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ৪১শ এবং গ্লোবাল এবলিং ট্রেড রিপোর্টে ২৫শ স্থানে রয়েছে।[১১৩] চেক প্রজাতন্ত্রের একটি বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি রয়েছে যা ২০১৬ সালের অর্থনৈতিক জটিলতা সূচকে ৭ম স্থানে রয়েছে।[১১৪] শিল্প খাত অর্থনীতির ৩৭.৫ শতাংশ এর জন্য দায়ী; এছাড়া পরিষেবাগুলি ৬০ শতাংশ এবং কৃষি রয়েছে ২.৫ শতাংশ।[১১৫] আমদানি ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হল জার্মানি এবং সাধারণভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১৭ সালে চেক কোম্পানীর বিদেশী মালিকদের ২৭০ বিলিয়ন চেক কোরুনা মূল্যের লভ্যাংশ প্রদান করা হয়, যা একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছিলো।[১১৬] ২০০৪ সালের ১ মে থেকে দেশটি শেনজেন অঞ্চলের সদস্য। ২১ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করে দেশটি তার প্রতিবেশীদের সাথে সীমানা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়।[১১৭]
রাজস্বের হিসাবে ২০১৮ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের বৃহত্তম কোম্পানিগুলো ছিলো: অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক স্কোডা অটো, ইউটিলিটি কোম্পানি সিইজেড গ্রুপ, অ্যাগ্রোফার্ট , শক্তি বাণিজ্য কোম্পানি ইপিএইচ, তেল প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা ইউনিপেট্রোল, ইলেকট্রনিক্স প্রস্তুতকারক ফক্সকন সিজেড এবং ইস্পাত প্রস্তুতকারক মোরাভিয়া স্টিল।[১১৮] অন্যান্য চেক পরিবহন সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে: এসকোডা ট্রান্সপোর্টেশন (ট্রামওয়েজ, ট্রলিবাস, মেট্রো), টাট্রা (ভারী ট্রাক, বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম গাড়ি নির্মাতা), এভিয়া (মাঝারি ট্রাক), কারোসা এবং এসওআর লিবচাভি (বাস), এরো ভডোচোডি (সামরিক বিমান), লেট কুনোভিস (বেসামরিক বিমান), জেটর (ট্রাক্টর), জাওয়া মোটো (মোটরসাইকেল) এবং চেজেটা (বৈদ্যুতিক স্কুটার)।
এসকোডা ট্রান্সপোর্টেশন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ট্রাম উৎপাদক। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ট্রাম চেক কারখানা থেকে আসে।[১১৯] এছাড়া চেক প্রজাতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম ভিনাইল রেকর্ড প্রস্তুতকারক। জিজেড মিডিয়া লোডিনিসে বার্ষিক প্রায় ৬ মিলিয়ন টুকরা রেকর্ড উৎপাদন করে।[১২০]চেস্কা ব্রোয়োভকা বিশ্বের দশটি বৃহত্তম আগ্নেয়াস্ত্র উৎপাদকের মধ্যে অন্যতম এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উৎপাদকদের মধ্যে পঞ্চম।[১২১]
খাদ্য শিল্পে সফল কোম্পানিগুলো হলো অ্যাগ্রোফার্ট, কোফোলা এবং হামে।
চেক প্রজাতন্ত্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার তুলনায় প্রায় ১০ টেরাওয়াট ঘন্টা বেশি। অতিরিক্ত এ অংশ অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়। পারমাণবিক শক্তি বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে, যা ৪০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ২০০৫ সালে, উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬৫.৪ শতাংশ বাষ্প ও জ্বলন কেন্দ্র (বেশিরভাগ কয়লা) দ্বারা, ৩০ শতাংশ পারমাণবিক কেন্দ্র দ্বারা এবং ৪.৬ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস (জলবিদ্যুৎ সহ) দ্বারা উৎপাদিত হয়েছিলো । চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র টেমেলিন নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন। এছাড়া ডুকোভানিতে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।
চেক প্রজাতন্ত্র শক্তির উৎস হিসাবে অত্যন্ত দূষিত নিম্ন-মানের বাদামী কয়লার উপর নির্ভরতা ক্রমাগত হ্রাস করছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের বেশিরভাগ অংশ (গার্হস্থ্য প্রয়োজনের প্রায় তিন চতুর্থাংশ) রুশ গ্যাজপ্রম থেকে আসে এবং অবশিষ্টাংশের বেশিরভাগ অংশ নরওয়েজীয় কোম্পানীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। রাশিয়ার গ্যাস ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে এবং নরওয়েজীয় গ্যাস জার্মানির মধ্য দিয়ে পরিবহন করা হয়।[১২২] সাধারণত গ্যাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করা হয়। দক্ষিণ মোরাভিয়ায় ছোট ছোট তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে।
২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], চেক প্রজাতন্ত্রের সড়কপথ ৫৫,৭৬৮.৩ কিলোমিটার (৩৪,৬৫২.৮ মা) দীর্ঘ, যার মধ্যে ১,২৭৬.৪ কিলোমিটার (৭৯৩.১ মা) মোটরওয়ে।[১২৩]গতিসীমা শহরে ৫০ কিমি/ঘন্টা, শহরের বাইরে ৯০ কিমি/ঘন্টা এবং মোটরওয়েতে ১৩০ কিমি/ঘন্টা।[১২৪]
চেক প্রজাতন্ত্রে বিশ্বের অন্যতম ঘন রেল পরিবহন রয়েছে। ২০২০ সালের হিসাবে, দেশে ৯,৫৪২ কিলোমিটার (৫,৯২৯ মা) রেলপথ রয়েছে, যার মধ্যে ৩,২৩৬ কিলোমিটার (২,০১১ মা) বিদ্যুতায়িত, ৭,৫০৩ কিলোমিটার (৪,৬৬২ মা) একক রেলপথ এবং ২,০৪০ কিলোমিটার (১,২৭০ মা) দ্বৈত ও বহু-লাইন বিশিষ্ট।[১২৫] রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৫,৩৬০ কিলোমিটার (৯,৫৪০ মা), যার মধ্যে ৬,৯১৭ কিলোমিটার (৪,২৯৮ মা) বিদ্যুতায়িত।[১২৬] চেস্কে ড্রাহি (চেক রেলপথ) দেশের প্রধান রেলপথ পরিচালক, যার মাধ্যমে বার্ষিক প্রায় ১৮০ মিলিয়ন যাত্রী চলাচল করে। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
প্রাগের ভাস্লাভ হাভেল বিমানবন্দরটি দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ২০১৯ সালে এটি ১৭.৮ মিলিয়ন যাত্রী পরিচালনা করেছে।[১২৭] চেক প্রজাতন্ত্রে মোট ৯১ টি বিমানবন্দর রয়েছে, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা সরবরাহ করে ছয়টি। পাবলিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি ব্রানো, কার্লোভি ভ্যারি, মনিকোভো হার্ডিসটিজি, মোসনভ (অস্ট্রাভার কাছে), পারডুবিস এবং প্রাগে অবস্থিত।[১২৮] এয়ারলাইন পরিচালনায় সক্ষম নন-পাবলিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি কুনোভিস এবং ভডোচডিতে অবস্থিত।[১২৯]
চেক প্রজাতন্ত্র সর্বোচ্চ গড় ইন্টারনেট গতিবিশিষ্ট শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।[১৩০] ২০০৮ সালের শুরুতে, ৮০০ টিরও বেশি স্থানীয় ডব্লিউআইএসপি[১৩১][১৩২] এবং ২০০৭ সালে প্রায় ৩৫০,০০০ গ্রাহক ছিলো। পরিকল্পনাগুলি তিনটি মোবাইল ফোন অপারেটর (টি-মোবাইল, ওটু, ভোডাফোন) এবং ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউ-ফন জিপিআরএস, এজ, ইউএমটিএস বা সিডিএমএ ২০০০ ভিত্তিক পরিষেবা প্রদান করছে। সরকারী মালিকানাধীন চেস্কি টেলিকম আস্র পর ব্রডব্যান্ডের অনুপ্রবেশকে হ্রাস পায়। ২০০৪ সালের শুরুতে, লোকাল-লুপ আনবান্ডলিং শুরু হয় এবং বিকল্প অপারেটররা অপ্রতিসম ডিজিটাল গ্রাহক লাইন (এডিএসএল) এবং প্রতিসম ডিজিটাল গ্রাহক লাইন (এসডিএসএল) সরবরাহ করা শুরু করে। এই ঘটনা এবং পরবর্তীকালে চেস্কি টেলিকমের বেসরকারীকরণ ইন্টারনেটের দাম কমাতে সাহায্য করেছে।
১ জুলাই ২০০৬ তারিখে, বৈশ্বিক (স্পেনীয় মালিকানাধীন) কোম্পানি টেলিফোনিকা গ্রুপ (বর্তমানে ওটু চেক প্রজাতন্ত্র) এসকিউ টেলিকম ক্রয় করে। ২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ভিডিএসএল এবং এডিএসএলটু+, সেকেন্ডে ৫০ মেগাবিট পর্যন্ত ডাউনলোড গতি এবং সেকেন্ডে ৫ মেগাবিট পর্যন্ত আপলোড গতি প্রদান করে। কেবল ইন্টারনেট তার উচ্চতর ডাউনলোড গতির কারণে (সেকেন্ডে ৫০ মেগাবিট থেকে সেকেন্ডে ১ গিগাবিট পর্যন্ত) জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
দুটি কম্পিউটার নিরাপত্তা সংস্থা, অ্যাভাস্ট এবং এভিজি চেক প্রজাতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৬ সালে পাভেল বাউডিসের নেতৃত্বে অ্যাভাস্ট তার প্রতিদ্বন্দ্বী এভিজি কোম্পানিকে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয়। সেসময়ে সংস্থা দুটির প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী বেস ছিলো এবং চীনের বাইরে ভোক্তা বাজারের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ এদের দখলে ছিলো।[১৩৩][১৩৪]অ্যাভাস্ট হচ্ছে অ্যান্টি-ভাইরাস সরবরাহকারীদের মধ্যে নেতৃত্বস্থানীয়, যার ২০.৫ শতাংশ বাজার শেয়ার রয়েছে।[১৩৫]
লন্ডন, প্যারিস, ইস্তাম্বুল এবং রোমের পরে প্রাগ ইউরোপের পঞ্চম সর্বাধিক পরিদর্শিত শহর।[১৩৬] ২০০১ সালে পর্যটন থেকে মোট আয় ছিলো ১১৮ বিলিয়ন চেক কোরুনা, যা জিএনপির ৫.৫ শতাংশ এবং সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের ৯ শতাংশ। এই শিল্পে ১,১০,০০০ এরও বেশি লোক কাজ করে (জনসংখ্যার ১% এরও বেশি)।[১৩৭]
ভ্রমণপঞ্জিতে এবং পর্যটকদের কাছে প্রাগে ট্যাক্সিচালক কর্তৃক অতিরিক্ত ভাড়াগ্রহণ এবং পকেটমার সমস্যা বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যেত।[১৩৮] ২০০৫ সাল থেকে প্রাগের মেয়র পাভেল বেম ছোটখাটো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।[১৩৯] এই সমস্যাগুলি বাদে প্রাগ একটি "নিরাপদ" শহর।[১৪০] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য বিভাগ চেক প্রজাতন্ত্রের অপরাধ হার "কম" হিসাবে বর্ণনা করেছে।[১৪১]
চেক প্রজাতন্ত্রের পর্যটন আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম[১৪২] অস্ট্রাভার নেথার জেলা ভিটকোভিস। চেক প্রজাতন্ত্রে ১৬টি ইউনেস্কোবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি আন্তর্জাতিক। ২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], আরও ১৪ টি স্থান অস্থায়ী তালিকায় রয়েছে।[১৪৩]
স্থাপত্য ঐতিহ্য দর্শকদের আগ্রহের একটি বস্তু - যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ের দুর্গ, যেমন কার্লস্টেইন দুর্গ, চেস্কি ক্রামলভ এবং লেডনিস-ভাল্টিস সাংস্কৃতিক দৃশ্যপট। এখানে ১২টি ক্যাথিড্রাল এবং ১৫টি গির্জা রয়েছে যা পোপ কর্তৃক ব্যাসিলিকা পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
শহর থেকে দূরে, বোহেমিয়ান প্যারাডাইস, বোহেমীয় অরণ্য ও জায়ান্ট পর্বতমালার মতো অঞ্চলগুলো বহিরঙ্গন সন্ধানকারী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। এখানে বেশ কয়েকটি বিয়ার উৎসব উদযাপিত হয়।
দেশটি এর অসংখ্য জাদুঘরের জন্যও পরিচিত। সারা দেশে বেশ কয়েকটি পুতুল নাচ প্রদর্শনী ও পুতুল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।[১৪৪] চেস্টলিসের অ্যাকোয়াপ্যালেস প্রাগ দেশের বৃহত্তম সলিলপার্ক।
চেক ভূমির বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের একটি দীর্ঘ এবং সু-নথিভুক্ত ইতিহাস রয়েছে।[১৪৫][১৪৬] বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রের একটি অত্যন্ত পরিশীলিত, উন্নত, উচ্চ-সম্পাদনশীল, উদ্ভাবন-ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় বিদ্যমান। সরকার,[১৪৭] শিল্প[১৪৮] এবং নেতৃস্থানীয় চেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো[১৪৯] এর পৃষ্ঠপোষক। চেক বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সদস্য।[১৫০] তারা প্রতি বছর একাধিক আন্তর্জাতিক একাডেমিক সাময়িকীতে অবদান রাখে এবং দেশ ও ক্ষেত্রের সীমানা পেড়িয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাথে একত্রে কাজ করে থাকে।[১৫১][১৫২][১৫৩][১৫৪] চেক প্রজাতন্ত্র ২০১৯ সালে বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ২৬শ স্থানে ছিল;[১৫৫] ২০২০ ও ২০২১ সালে যা উন্নীত হয় ২৪শ স্থানে।[১৫৬][১৫৭]
ঐতিহাসিকভাবে, চেক ভূমি বিশেষ করে প্রাগ, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অন্যতম জন্মস্থল ছিলো, যা টাইকো ব্রাহে, নিকোলাস কোপার্নিকাস এবং ইয়োহানেস কেপলার সহ প্রারম্ভিক আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৭৮৪ সালে রয়েল চেক সোসাইটি অফ সায়েন্সেস নামের অধীনে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়টি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস নামে পরিচিত।[১৫৮] একইভাবে, চেক ভূমিতে বিজ্ঞানীদের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ইতিহাস রয়েছে,[১৫৯][১৬০] যার মধ্যে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী জৈব রসায়নবিদ গার্টি এবং কার্ল ফার্দিনান্দ কোরি, রসায়নবিদ ইয়ারোস্লাভ হেরোভস্কি, রসায়নবিদ অটো উইচটারলে, পদার্থবিদ পিটার গ্রুনবার্গ এবং রসায়নবিদ অ্যান্টোনিন হোলি।[১৬১] মনোবিশ্লেষণের প্রতিষ্ঠাতা সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রিবোরে জন্মগ্রহণ করেন,[১৬২]জিনতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল হাইনচিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন বার্নোতে।[১৬৩]
বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক গবেষণা লাতিন বা জার্মান ভাষায় রেকর্ড করা হয়েছিল এবং ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত গ্রন্থাগারগুলিতে সংরক্ষণাগারভুক্ত করা হয়েছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্থান যেমন স্ট্রাহভ মঠ এবং প্রাগের ক্লেমেন্টিনামে এর প্রমাণ রয়েছে। ক্রমান্বয়ে চেক বিজ্ঞানীরা তাদের কাজ এবং তাদের ইতিহাস ইংরেজিতে প্রকাশ করা শুরু করে।[১৬৪][১৬৫]
বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান হল চেক একাডেমী অব সায়েন্সেস, বার্নোতে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ডলনি বিওয়েনিতে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার কেন্দ্র এলি বিমলাইনস। প্রাগ হল জিএসএ এজেন্সির প্রশাসনিক কেন্দ্রের আসন যা ইউরোপীয় নেভিগেশন সিস্টেম গ্যালিলিও (স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম) এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এজেন্সি ফর দ্য স্পেস প্রোগ্রাম পরিচালনা করে।
২০২০ সালের অনুমিত মোট উর্বরতার হার (টিএফআর) ছিল ১.৭১, যা প্রতিস্থাপন হার ২.১ এর চেয়ে কম।[১৬৬] চেক প্রজাতন্ত্রের জনসংখ্যার গড় বয়স ৪৩.৩ বছর।[১৬৭] ২০২১ সালে অনুমিত গড় আয়ু ৭৯.৫ বছর (পুরুষ ৭৬.৫৫ বছর, মহিলা ৮২.৬১ বছর)।[১৬৮] বছরে প্রায় ৭৭,০০০ জন মানুষ চেক প্রজাতন্ত্রে অভিবাসী হয়।[১৬৯] ভিয়েতনামী অভিবাসীরা কমিউনিস্ট আমলে দেশটিতে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে, যখন চেকোস্লোভাক সরকার তাদের অতিথি শ্রমিক হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়।[১৭০] ২০০৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্রে প্রায় ৭০,০০০ ভিয়েতনামী ছিল।[১৭১] বেশিরভাগই স্থায়ীভাবে দেশে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।[১৭২]
২০২১ সালের জনশুমারির ফলাফল অনুযায়ী, চেক প্রজাতন্ত্রের বেশিরভাগ অধিবাসী চেক (৫৭.৩ শতাংশ)। এছাড়া রয়েছে মোরাভীয় (৩.৪ শতাংশ), স্লোভাক (০.৯ শতাংশ), ইউক্রেনীয় (০.৭ শতাংশ), ভিয়েত (০.৩ শতাংশ), পোল (০.৩ শতাংশ), রুশ (০.২ শতাংশ), সিলেসিয়ান (০.১ শতাংশ) এবং জার্মান (০.১ শতাংশ)। অন্য ৪.০ শতাংশ দ্বৈত জাতীয়তার (৩.৬ শতাংশ চেক এবং অন্যান্য জাতীয়তার সংমিশ্রণ) পরিচয় দিয়েছে। যেহেতু 'জাতীয়তা' একটি ঐচ্ছিক বিষয় ছিল, তাই বেশ কিছু লোক এই ক্ষেত্রটি খালি (৩১.৬ শতাংশ) রেখেছিল।[৪] কিছু অনুমান অনুসারে, চেক প্রজাতন্ত্রে প্রায় ২৫০,০০০ রোমানি লোক রয়েছে।[১৭৩][১৭৪] পোলিশ সংখ্যালঘুরা প্রধানত জাওলজি অঞ্চলে বাস করে।[১৭৫]
চেক পরিসংখ্যান কেন্দ্রের মতে, ২০১৬ সালে দেশটিতে ৪,৯৬,৪১৩ জন (জনসংখ্যার ৪.৫ শতাংশ) বিদেশী বসবাসরত ছিল, যার মধ্যে বৃহত্তম দল ইউক্রেনীয় (২২ শতাংশ), স্লোভাক (২২ শতাংশ), ভিয়েত (১২ শতাংশ), রুশ (৭ শতাংশ) এবং জার্মান (৪ শতাংশ)। বিদেশী জনসংখ্যার বেশিরভাগই প্রাগ অঞ্চলে (৩৭.৩ শতাংশ) এবং কেন্দ্রীয় বোহেমিয়া অঞ্চলে (১৩.২ শতাংশ) বাস করে।[১৭৬]
বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার ইহুদি জনসংখ্যা (১৯৩০ সালের জনশুমারি অনুযায়ী ১,১৮,০০০ জন) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরইহুদি গণহত্যার সময় নাৎসি জার্মানি দ্বারা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।[১৭৭] ২০২১ সালে চেক প্রজাতন্ত্রে প্রায় ৩,৯০০ জন ইহুদি ছিল।[১৭৮] সাবেক চেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ান ফিশার ইহুদি ধর্মাবলম্বী।[১৭৯]
চেক অধিবাসীদের জাতীয়তা (যারা ২০২১ সালের জনশুমারিতে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে):[১৮০][১৮১]
জরিপে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ[১৮৪] থেকে ৭৯% ভাগ[১৮৫] অধিবাসী কোন ধর্ম বা বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করে না। বসবাসরত নিশ্চিত নাস্তিক জনসংখ্যার অনুপাত (৩০ শতাংশ), চীন (৪৭ শতাংশ) ও জাপান (৩১ শতাংশ ) এর পরে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ।[১৮৬] চেক জনগণ ঐতিহাসিকভাবে "সহনশীল এবং এমনকি ধর্মের প্রতি উদাসীন" হিসেবে চিহ্নিত।[১৮৭]
৯ম ও ১০ম শতাব্দীর খ্রিষ্টীয়করণের মাধ্যমে ক্যাথলিক মণ্ডলীর প্রবর্তন হয়। বোহেমিয়ান সংস্কারের পর চেক জনগণের বেশিরভাগ ইয়ান হুস, পেট্রা খেলচিস্কি ও অন্যান্য আঞ্চলিক প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারকদের অনুসারী হয়ে ওঠে। ট্যাবোরাট এবং ইউট্রাকুইস্টরা হুসাইট গ্রুপ ছিল। হুসাইট যুদ্ধের শেষের দিকে, উট্রাকুইস্টরা পক্ষ পরিবর্তন করে এবং ক্যাথলিক চার্চের সাথে মিত্রতা করে। যৌথ উট্রাকুইস্ট-ক্যাথলিক বিজয়ের পরে, ক্যাথলিক চার্চ বোহেমিয়াতে অনুশীলনের জন্য উট্রাকুইজমকে খ্রিস্টধর্মের একটি স্বতন্ত্র রূপ হিসাবে গ্রহণ করে এবং অবশিষ্ট সমস্ত হুসাইট গ্রুপকে নিষিদ্ধ করে। সংস্কারের পর, কিছু বোহেমিয়ান (বিশেষ করে সুদাতেন জার্মানরা) মার্টিন লুথারের শিক্ষা গ্রহণ করে। সংস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে, উট্রাকুইস্ট হুসাইটরা নতুন ক্রমবর্ধমান ক্যাথলিক বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে এবং কিছু পরাজিত হুসাইট দল পুনরুজ্জীবিত হয়। হাবসবার্গরা বোহেমিয়ার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর পুরো জনসংখ্যাকে জোর করে ক্যাথলিক ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়। উট্রাকুইস্ট হুসাইটরাও এর থেকে বাদ যায়নি। ক্রমাগত, চেকরা ধর্মের ব্যাপারে আরও সতর্ক ও হতাশাবাদী হয়ে ওঠে। ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এটি ১৯২০ সালে নব্য-হুসাইট চেকোস্লোভাক হুসাইট চার্চের সাথে একটি বিভেদের শিকার হয়। কমিউনিস্ট যুগে অনুসারীদের বেশিরভাগ অংশই হারিয়ে গিয়েছে এবং আধুনিক চলমান ধর্মনিরপেক্ষতার সময়কালেও তারা হারিয়ে যাচ্ছে। ১৬২০ সালে অস্ট্রিয় হাবসবার্গ কর্তৃক সংস্কারবিরোধী আন্দোলন প্রবর্তনের পরে প্রোটেস্ট্যান্টিজম আর কখনও পুনরুদ্ধার হয়নি।
২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ কোন ধর্ম বিহীন, ১০.৩ শতাংশ ক্যাথলিক, ০.৮ শতাংশ প্রোটেস্ট্যান্ট (০.৫ শতাংশ চেক ভ্রাতৃদ্বয় এবং ০.৪ শতাংশ হুসাইট)[১৮৮] এবং ৯ শতাংশ ধর্মের অন্যান্য সম্প্রদায়গত বা অসম্প্রদায়গত রূপ অনুসরণ করে (যার মধ্যে ৮৬৩ জন উত্তর দিয়েছিল যে তারা পৌত্তলিক)। ৪৫ শতাংশ মানুষ ধর্ম বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।[১৬৭] ১৯৯১ থেকে ২০০১ এবং পরে ২০১১ সাল পর্যন্ত ক্যাথলিকধর্মের প্রতি আনুগত্য ৩৯ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশ এবং পরে ১০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রোটেস্ট্যান্টবাদ একইভাবে ৩.৭ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ এবং তারপরে ০.৮ শতাংশে নেমে আসে।[১৮৯] মুসলিম জনসংখ্যা আনুমানিক ২০,০০০ জন (জনসংখ্যার শতকরা ০.২ ভাগ)।[১৯০]
দেশব্যাপী ধর্মীয় বিশ্বাসীদের অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়; জিলিন অঞ্চলে অনুপাত ৫৫ শতাংশ এবং উস্তি নাদ লাবেম অঞ্চলে ১৬ শতাংশ।[১৯১]
চেক প্রজাতন্ত্রে শিক্ষা নয় বছরের জন্য বাধ্যতামূলক এবং নাগরিকদের জন্য অবৈতনিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাসুবিধা বিদ্যমান। শিক্ষার সময়কাল গড়ে ১৩.১ বছর।[১৯২] উপরন্তু, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় চেক প্রজাতন্ত্রে একটি "তুলনামূলকভাবে সমান" শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।[১৯৩] ১৩৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চার্লস বিশ্ববিদ্যালয় মধ্য ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের অন্যান্য প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হল মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয়, চেক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পালাস্কি বিশ্ববিদ্যালয়, একাডেমি অফ পারফর্মিং আর্টস এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইকোনমিক্স।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) কর্তৃক সমন্বিত আন্তর্জাতিক ছাত্র মূল্যায়নের প্রোগ্রাম, চেক প্রজাতন্ত্রের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ১৫শ সবচেয়ে সফল হিসেবে স্থান দিয়েছে, যা ওইসিডি গড়ের চেয়ে বেশি।[১৯৪]জাতিসংঘের শিক্ষা সূচকে ২০১৩ সালের হিসাবে চেক প্রজাতন্ত্র ১০ম স্থানে রয়েছে (ডেনমার্কের পিছনে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে এগিয়ে)।[১৯৫]
চেক প্রজাতন্ত্রের স্বাস্থ্যসেবা অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর মানের অনুরূপ। চেক বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একটি বাধ্যতামূলক বীমা মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক 'কর্মসংস্থান সম্পর্কিত বীমা' দ্বারা অর্থায়নকৃত অর্থের বিনিময়ে সেবা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।[১৯৬] ২০১৬ ইউরো স্বাস্থ্য ভোক্তা সূচক (ইউরোপে স্বাস্থ্যসেবার তুলনার মাধ্যম) অনুযায়ী, চেক স্বাস্থ্যসেবা ১৩শ স্থানে রয়েছে (সুইডেনের থেকে এক ধাপ পিছনে এবং যুক্তরাজ্যের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে)।[১৯৭]
আধুনিক চিত্রশিল্পী আলফন্স মুকা কর্তৃক বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ এবং শীত (১৮৯৬)
ডলনি ভিস্টোনিসের ভেনাস প্রাগৈতিহাসিক শিল্পের একটি সম্পদ। গথিক যুগের একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন প্রাগের থিওডোরিক যিনি কার্লস্টেইন দুর্গ সজ্জিত করেন। বারোক যুগের কিছু শিল্পী হলেন ভাস্লাভ হলার, ইয়ান কুপেস্কি, কারেল স্ক্রেটা, আন্তন রাফায়েল মেংস অথবা পেট্রা ব্রান্ডেল, ভাস্কর ম্যাথিয়াস ব্রন এবং ফার্ডিনান্ড ব্রকফ। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে যোসেফ মানেস রোমান্টিক আন্দোলনে যোগ দেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের প্রধান ব্যক্তিবর্গ তথাকথিত "জাতীয় থিয়েটার প্রজন্ম": ভাস্কর জোসেফ ভাস্লাভ মাইসলবেক এবং চিত্রশিল্পী মিকোলাশ আলেশ, ভাস্লাভ ব্রোজিক, ভোইটেখ হিনাইস অথবা জুলিয়াস মারাক। শতাব্দীর শেষের দিকে আধুনিক শিল্পের একটি জোয়ার আসে। আলফন্স মুকা হয়ে ওঠেন এর প্রধান প্রতিনিধি। তিনি আধুনিক শিল্পের অন্তর্ভুক্ত পোস্টার এবং স্লাভ এপিক নামে ২০টি বড় ক্যানভাসের শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত, যা চেক এবং অন্যান্য স্লাভদের ইতিহাসকে চিত্রিত করে। ২০১২-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], স্লাভ এপিকটি প্রাগের জাতীয় গ্যালারীর ভেলেট্রিনি প্যালেসে প্রদর্শিত হয়। স্থাপনাটি চেক প্রজাতন্ত্রের শিল্পের বৃহত্তম সংগ্রহশালা পরিচালনা করে।
ম্যাক্স শ্ভাবিনস্কি ছিলেন আরেকজন আধুনিক চিত্রশিল্পী। বিংশ শতাব্দীতে একটি নিরীক্ষাধর্মী বিপ্লব (আভান্ট-গার্ডে) ঘটে। এসময় চেক শিল্পে অভিব্যক্তিবাদী এবং কিউবিস্ট (জ্যামিতিক চিত্রকার) ছিলেন জোসেফ উপেক, এমিল ফিলা, বোহুমিল কুবিস্তা এবং ইয়ান জারজাভি। মূলত টয়েন, জোসেফ শিমা এবং কারেল টেইগের কাজের মাধ্যমে পরাবাস্তববাদের আবির্ভাব ঘটে। এছাড়া ফ্রান্টিশেক কুপকা ছিলেন বিমূর্ত শিল্পের অগ্রদূত। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে জোসেফ লাডা, জেনেক বারিয়ান কিংবা এমিল ওরলিক অঙ্কনশিল্পী ও কার্টুনিস্ট হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফ্রানটিশেক ডরটিকোল, জোসেফ সুডেক এবং পরবর্তীতে ইয়ান সাউডেক কিংবা জোসেফ কুডেলকার হাত ধরে আলোকচিত্র শিল্প নামের এক নতুন ক্ষেত্র গড়ে ওঠে।
চেক প্রজাতন্ত্র এর স্বতন্ত্রভাবে তৈরি, মুখ-বিস্ফোরিত এবং সজ্জিত বোহেমিয়ান গ্লাসের জন্য পরিচিত।
বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার প্রাচীনতম সংরক্ষিত পাথরের ভবনগুলো নবম ও দশম শতাব্দীতে খ্রিস্টীয়করণের সময়কালে নির্মিত। মধ্যযুগ থেকে, চেক ভূমি পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের মতো একই স্থাপত্য শৈলী ব্যবহার করে আসছে। বিদ্যমান প্রাচীনতম গির্জাগুলি রোমান শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে তার স্থান দখল করে গথিক শৈলী। চতুর্দশ শতাব্দীতে সম্রাট চতুর্থ চার্লস ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে স্থপতিদের (আরাসের ম্যাথিয়াস এবং পিটার পার্লার) প্রাগে তার দরবারে আমন্ত্রণ জানান। মধ্যযুগে, রাজা এবং অভিজাতবর্গের হাত ধরে কিছু দুর্গ ও মঠ তৈরি হয়।
১৫ শতকের শেষের দিকে বোহেমীয় সাম্রাজ্যে রেনেসাঁ শৈলী প্রবেশ করে এবং এর উপাদানগুলো পুরানো গথিক শৈলীর সাথে মিশ্রিত হতে শুরু করে। বোহেমিয়ার বিশুদ্ধ রেনেসাঁ স্থাপত্যের একটি উদাহরণ হল রানী অ্যানের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, যা প্রাগ প্রাসাদের বাগানে অবস্থিত ছিল। তোরণ আঙ্গিনা এবং জ্যামিতিকভাবে সাজানো বাগানযুক্ত প্রশস্ত বাগানবাড়ির স্থাপনায় ইতালীয় স্থপতিদের স্পষ্ট অবদান রেনেসাঁর সাধারণ পরিগ্রহণের উদাহরণ।[১৯৮] নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণ এসময় শুরু হয়।[১৯৯]
সপ্তদশ শতাব্দীতে বোহেমিয়া সাম্রাজ্যজুড়ে বারোক শৈলী ছড়িয়ে পড়ে।[২০০]
অষ্টাদশ শতাব্দীতে বোহেমিয়া বারোক-গথিক শৈলী নামের একটি বিশেষ স্থাপত্যশৈলী গঠন করে যা গথিক ও বারোক শৈলীর সংশ্লেষণে তৈরি হয়।[১৯৮]
ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থাপত্য শৈলী পুনরুজ্জীবন শুরু হয়। কিছু গির্জায় তাদের অনুমিত মধ্যযুগীয় চেহারা পুনরুদ্ধার করা হয় এবং নব্য-রোমান, নব্য-গথিক এবং নব্য-রেনেসাঁ শৈলীতে ভবন নির্মিত হয়। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে চেক ভূমিতে নতুন শিল্প শৈলী আবির্ভূত হয় যার নাম আধুনিক শিল্প।
বোহেমিয়া বিশ্বের স্থাপত্য ঐতিহ্যে একটি অস্বাভাবিক শৈলী উপহার দিয়েছিল আর চেক স্থপতিরা অঙ্কন ও ভাস্কর্যের কিউবিজমকে স্থাপত্যে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছিল।
প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে কার্যসর্বস্বতা (ফাংশনালিজম) তার শান্ত, প্রগতিশীল রুপ নিয়ে প্রধান স্থাপত্য শৈলীর স্থান অধিগ্রহণ করে।[১৯৮]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৪৮ সালের কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের পর চেকোস্লোভাকিয়ার শিল্প সোভিয়েত-প্রভাবিত হয়ে ওঠে। চেকোস্লোভাক আভান্ট-গার্ডে শৈল্পিক আন্দোলনটি ব্রাসেলস শৈলী হিসাবে পরিচিত যা ১৯৬০-এর দশকে চেকোস্লোভাকিয়ার রাজনৈতিক উদারীকরণের সময় উত্থিত হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে নিষ্ঠুরতা শৈলী আধিপত্য বিস্তার করে।
চেক প্রজাতন্ত্র আন্তর্জাতিক স্থাপত্যের অত্যাধুনিক প্রবণতা থেকেও নিজেকে দূরে রাখেনি, যার একটি উদাহরণ হল প্রাগের ডান্সিং হাউস (তানশিকি ডেম), প্রাগের গোল্ডেন এঞ্জেল বা জিলিন এর কংগ্রেস সেন্টার।[১৯৮]
বর্তমান চেক অঞ্চলের সাহিত্য বেশিরভাগই চেক ভাষায় লেখা হয়েছিল। তবে লাতিন ও জার্মান কিংবা ওল্ড চার্চ স্লাভোনিকেও লেখা হয়েছিল। ফ্রাঞ্জ কাফকা চেক ও জার্মান ভাষায় দ্বিভাষিক[২০১][২০২] হলেও তার লেখাগুলো (দ্য ট্রায়াল, দ্য ক্যাসেল) ছিলো জার্মান ভাষায়।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে প্রাগের রাজকীয় আদালত জার্মান মিনেসাং ও কোর্টলি সাহিত্যের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। চেকের জার্মান ভাষার সাহিত্য বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে লেখা হয়।
চেক সাহিত্যের বিকাশে বাইবেলের অনুবাদগুলো ভূমিকা পালন করেছিল। গীতসংহিতার (psalms) প্রাচীনতম চেক অনুবাদটি ১৩শ শতকের শেষের দিকে উদ্ভূত হয় এবং বাইবেলের প্রথম সম্পূর্ণ চেক অনুবাদ ১৩৬০ সালের দিকে শেষ হয়। ১৪৮৮ সালে প্রথম সম্পূর্ণ মুদ্রিত চেক বাইবেল প্রকাশিত হয়। মূল ভাষা থেকে অনূদিত প্রথম সম্পূর্ণ চেক বাইবেল প্রকাশিত হয় ১৫৭৯ থেকে ১৫৯৩ সালের মধ্যে। ১২শ শতকের কোডেক্স জিগাস বিশ্বের বৃহত্তম মধ্যযুগীয় পাণ্ডুলিপি যা এখনো বর্তমান।[২০৩]
চেক ভাষার সাহিত্যকে বেশ কয়েকটি সময়কালে ভাগ করা যেতে পারে: মধ্যযুগ; হুসাইট যুগ; রেনেসাঁ মানবতাবাদ; বারোক যুগ; ১৯শ শতাব্দীর প্রথমার্ধের বোধন ও চেক পুনর্জাগরণ, ১৯শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আধুনিক সাহিত্য; আন্তঃযুদ্ধকালীন সময়ের আভান্ট-গার্ডে; কমিউনিজমের অন্তর্গত সময় এবং চেক প্রজাতন্ত্র।
যুদ্ধবিরোধী হাস্যরসাত্মক উপন্যাস "দ্য গুড সোলজার 'শ্ভেয়িক" ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি অনূদিত চেক ভাষার বই।
আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার ফ্রান্ৎস কাফকা পুরস্কার চেক প্রজাতন্ত্রে প্রদান করা হয়।[২০৪]
চেক প্রজাতন্ত্রে ইউরোপের সবচেয়ে ঘনসন্নিবিষ্ট গ্রন্থাগার বিদ্যমান।[২০৫]
চেক সাহিত্য ও সংস্কৃতি জনজীবনে দুইবার বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল, যখন চেকরা নিপীড়নের অধীনে বাস করছিল এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ দমন করা হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রে (১৯শ শতাব্দীর শুরুর দিকে এবং ১৯৬০-এর দশকে) চেকরা তাদের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং একটি আত্মবিশ্বাসী ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন জাতি প্রতিষ্ঠাকল্পে ব্যবহার করেছিল।[২০৬]
চেক ভূমির সংগীত প্রথা গীর্জার স্তোত্রগানের মাধ্যমে সূচনা লাভ করে; ১০ম থেকে ১১শ শতাব্দীতে যার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: সংগীত "প্রভু, আমাদের কৃপা করুন" (চেক: Hospodine, pomiluj ny) ও স্তোত্র "সেন্ট ওয়েন্সেসলাস" বা "সেন্ট ওয়েনসেসলাস করাল"।[২০৭] কিছু ইতিহাসবিদ "প্রভু, আমাদের কৃপা করুন" এর লেখক হিসেবে প্রাগেরবিশপ সেন্ট অ্যাডালবার্ট (ভোইটেক নামেও পরিচিত) এর নাম উল্লেখ করেন। তিনি ৯৫৬ থেকে ৯৯৭ সালে বর্তমান ছিলেন।[২০৮]
সংগীত সংস্কৃতির ঐশ্বর্য বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়কালের সঙ্গীত শাখা বিশেষত বারোক, ধ্রুপদী , রোমান্টিকতা, আধুনিক ধ্রুপদী এবং বোহেমিয়া, মোরাভিয়া ও সিলেসিয়ার ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীতে নিহিত। কৃত্রিম সংগীতের প্রারম্ভিক যুগ থেকে, চেক সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকাররা এই অঞ্চলের লোকসংগীত ও নৃত্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
চেক সংগীত ইউরোপ ও বিশ্ব এই উভয় প্রেক্ষাপটেই "উপকারী" হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। উচ্চাঙ্গসংগীত এবং বারোক, রোমান্টিকতা ও আধুনিক ধ্রুপদী সংগীতের ঊর্ধ্বেও এটিকে সংগীত কলার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূত্রপাত হিসেবে বিবেচনা করা সম্ভব।[২০৯] কিছু চেক সংগীতশিল্প হলো দ্য বার্টার্ড ব্রাইড, নিউ ওয়ার্ল্ড সিম্ফনি, সিনফোনিয়েটা এবং জেনুফা।
দেশটির অন্যতম সঙ্গীত উৎসব প্রাগের বসন্তকালীন আন্তর্জাতিক উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গীতায়োজন, যা বৈশ্বিক শিল্পী, সিম্ফনিঅর্কেস্ট্রা এবং চেম্বার সঙ্গীত শিল্পীদের জন্য একটি স্থায়ী প্রদর্শনী।
প্রাগের জাতীয় নাট্যশালা (বামে) এবং এস্টেটস থিয়েটার (ডানে)
চেক নাট্যশালার শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় মধ্যযুগে, বিশেষত গথিক যুগের সাংস্কৃতিক জীবনে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে নাট্যশালাটি জাতীয় জাগরণ আন্দোলনে ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তীতে বিংশ শতাব্দীতে এটি আধুনিক ইউরোপীয় নাট্যশিল্পের একটি অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে মূল চেক সাংস্কৃতিক ঘটনাটি রচিত হয়। এই প্রকল্পটি ল্যাটারনা ম্যাগিকা নামে পরিচিত, যা নাট্য শিল্প, নৃত্যশিল্প এবং চলচ্চিত্রকে কাব্যিক পদ্ধতিতে একত্রিত করে প্রযোজনা করা হয়। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটি প্রথম বহুমাত্রিক শিল্প প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
কারেল শাপেকের আর. ইউ. আর. নাটকে প্রথমবারের মতো রোবট শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[২১০]
চেক চিত্রগ্রহণের ঐতিহ্য ১৮৯০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয়েছিল। নিরব চলচ্চিত্রের যুগের প্রযোজনার মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক নাটক দ্য বিল্ডার অব দ্য টেম্পল এবং গুস্তাভ মাচাতি পরিচালিত সামাজিক ও প্রেমমূলক নাটক ইরোটিকন।[২১২] শব্দযুক্ত চলচ্চিত্রের যুগ ছিল মূলধারার বিভিন্ন চলচ্চিত্র যেমন মার্টিন ফ্রিশ অথবা কারেল লামাশের হাস্যরসাত্মক প্রযোজনা দিয়ে পরিপূর্ণ। এছাড়া ছিলো নাটকীয় চলচ্চিত্র যা আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় ছিল।
হার্মিনা তুর্লোভা (১১ ডিসেম্বর ১৯০০ — ৩ মে ১৯৯৩) ছিলেন একজন বিশিষ্ট চেক অ্যানিমেটর, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র পরিচালক। তাকে প্রায়শই চেক অ্যানিমেশনের জননী বলা হত। তার কর্মজীবনে তিনি পুতুল এবং স্টপ মোশন অ্যানিমেশন কৌশল ব্যবহার করে ৬০ টিরও বেশি শিশুতোষ অ্যানিমেটেড ক্ষুদ্র চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
জার্মান দখলদারিত্বের পূর্বে, ১৯৩৩ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অ্যানিমেটর ইরেনা ডোদালোভা তার স্বামী ক্যারেল ডোডালের সাথে প্রথম চেক অ্যানিমেশন স্টুডিও "আইআরই ফিল্ম" প্রতিষ্ঠা করেন।
নাৎসি দখলদারিত্বের সময়কাল এবং ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকের চলচ্চিত্রে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতা প্রতিফলনের (কিছু ব্যতিক্রম যেমন, "ক্রাকাটিট" বা ১৯৪৬ সালে পাম ডি'অর বিজয়ী "মেন উইদআউট উইংস") প্রারম্ভিক কমিউনিস্ট আনুষ্ঠানিক নাটকীয়তা শেষ হওয়ার পর, অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র দিয়ে চেক চলচ্চিত্র শিল্পের একটি নতুন যুগ শুরু হয়। এগুলো ১৯৫৮ সাল থেকে "জুলস ভার্নের কল্পনাপ্রসূত বিশ্ব" শিরোনামে অ্যাংলোফোন দেশগুলিতে সঞ্চালিত হয়েছিল যাতে অভিনীত নাটক ও অ্যানিমেশনের এক সংমিশ্রণ ছিলো। এছাড়া আধুনিক পুতুল চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠাতা জিজি ট্রানকাও এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[২১৩] এই ঘটনা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র (করটেক বা মোল চরিত্র ইত্যাদি) নির্মাণের একটি ঐতিহ্য শুরু করে।
১৯৬০-এর দশকে চেকোস্লোভাক নবজোয়ারের চলচ্চিত্রগুলোতে তাৎক্ষণিককৃত সংলাপ, তিক্ত এবং অযৌক্তিক হাস্যরস এবং অপেশাদার অভিনেতাদের দখল বিদ্যমান ছিল। পরিচালকরা দৃশ্যের পরিমার্জনা ও কৃত্রিম বিন্যাস ছাড়াই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করতেন। ১৯৬০-এর দশক এবং ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকের মৌলিক পাণ্ডুলিপি এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাববিশিষ্ট একজন ব্যক্তিত্ব হলেন ফ্রানটিশেক ভ্লাশিল। আরেকজন আন্তর্জাতিক লেখক হলেন ইয়ান শ্বাঙ্কমায়ের, যিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং শিল্পী, যার কাজ বিভিন্ন ক্ষেত্রব্যাপী বিস্তৃত। তিনি অ্যানিমেশনের জন্য পরিচিত একজন স্বঘোষিত পরাবাস্তববাদী।[২১৪]
প্রাগের ব্যারান্ডভ স্টুডিয়োগুলি দেশের বৃহত্তম চিত্রধারণ স্থানযুক্ত চলচ্চিত্র স্টুডিয়ো।[২১৫] চলচ্চিত্র নির্মাতারা বার্লিন, প্যারিস এবং ভিয়েনায় পাওয়া যায় না এমন দৃশ্য ধারণের জন্য প্রাগে আসেন। কার্লোভি ভেরি শহর ২০০৬ সালের জেমস বন্ড চলচ্চিত্রক্যাসিনো রয়েল এর দৃশ্যধারণের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।[২১৬]
চলচ্চিত্রে বিশেষ অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ চেক পুরস্কার দ্য চেক লায়ন। কার্লোভি ভেরি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব যাকে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির আন্তর্জাতিক সংঘ (এফআইএপিএফ) প্রতিযোগিতামূলক মর্যাদা দিয়েছে। দেশে অনুষ্ঠিত অন্যান্য চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে রয়েছে ফেবিওফেস্ট, জিহলাভা আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ওয়ান ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, জিলিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং ফ্রেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।
চেক সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের এক বিশেষ মাত্রার স্বাধীনতা রয়েছে। নাৎসিবাদ, বর্ণবাদ বা চেক আইন উল্লঙ্ঘনের সমর্থনে লেখার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। ২০২১ সালে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস কর্তৃক বিশ্ব স্বাধীনতা সূচকে চেক গণমাধ্যমকে ৪০তম সর্বাধিক স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছিল।[২১৭]রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি এর সদর দপ্তর প্রাগে অবস্থিত।
জাতীয় পাবলিক টেলিভিশন পরিষেবা হল চেক টেলিভিশন যা ২৪ ঘন্টাব্যাপী খবরের চ্যানেল শেটে ২৪ (ČT24) এবং খবরের ওয়েবসাইট সিটি২৪.সিজেড (ct24.cz) পরিচালনা করে। ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], চেক টেলিভিশন সবচেয়ে বেশি দেখা টেলিভিশন, যার পরের স্থানে রয়েছে বেসরকারী টেলিভিশন টিভি নোভা এবং প্রাইমা টিভি। যাইহোক, টিভি নোভায় প্রচারিত প্রধান সংবাদ প্রোগ্রাম এবং প্রাইম টাইম প্রোগ্রাম সবচেয়ে বেশি দেখা হয়।[২১৮] অন্যান্য পাবলিক পরিষেবাগুলির মধ্যে রয়েছে চেক রেডিও এবং চেক সংবাদসংস্থা।
২০২০-২০২১ সালে সর্বাধিক বিক্রিত দৈনিক জাতীয় সংবাদপত্রগুলো হল ব্লেস্ক (গড় দৈনিক পাঠক ৭,০৩,০০০), ম্লাদা ফ্রন্টা ডিএনইএস (গড় দৈনিক পাঠক ৪,৬১,০০০), প্রাভো (গড় দৈনিক পাঠক ১,৮২,০০০), লিডোভে নোভিনি (গড় দৈনিক পাঠক ১,৬৩,০০০) এবং হোসপোদারস্কে নোভিনি (গড় দৈনিক পাঠক ১,৬২,০০০)।[২১৯]
অধিকাংশ চেক জনগণ (৮৭ শতাংশ[২২০]) সংবাদ পড়ার ক্ষেত্রে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে।[২২১] যার মধ্যে ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকৃত ওয়েবসাইট শেনজাম (Seznam.cz), আইডিএনইএস (iDNES.cz), নোভিংকি (Novinky.cz), আইপ্রাইমা (iPrima.cz) এবং সেজানাম জেডপ্রাভি (Zprávy.cz)।[২২২]
চেক রন্ধনপ্রণালীতে শুয়োরের মাংস, গরুর মাংস এবং মুরগির মাংসের খাবারের উপর জোর দেয়া হয়। রাজহাঁস, হাঁস, খরগোশ এবং ভেনিসন পরিবেশন করা হয়। মাছ সাধারণত কম দেখা যায়। তবে বড়দিনের মতো বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানে তাজা ট্রাউট এবং কার্প মাছ পরিবেশন করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় সসেজ, উর্স্ট, পেটিস, এবং ধূমায়িত ও কিউরিংকৃত মাংস প্রচলিত রয়েছে। চেক মিষ্টান্নের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হুইপড ক্রিম, চকোলেট, ফলের পেস্ট্রি এবং টার্ট, ক্রেপস, ক্রেম ডেজার্ট এবং পনির, পোস্ত-বীজ-ভরা ও অন্যান্য ধরনের ঐতিহ্যবাহী কেক যেমন বুচি, কোলাশ এবং স্ট্রুডল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
চেক বিয়ারের ইতিহাস এক সহস্রাব্দেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত; প্রাচীনতম পরিচিত মদের কারখানা ৯৯৩ সালে বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রে মাথাপিছু বিয়ারের ব্যবহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পিলজেনার ধরনের বিয়ার (পিলস) এর উৎপত্তি হয়েছে পিলজেন অঞ্চলে, যেখানে বিশ্বের প্রথম সোনালি ল্যাগার পিলজেনার উরকেল এখনও উৎপাদিত হয়। বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত বিয়ারের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে এটি। চেস্কে বুদেজোভিসে শহর একই পদ্ধতিতে তাদের বিয়ারকে নাম দিয়েছে, যা বুডোয়েজার বুডভার নামে পরিচিত।
দক্ষিণ মোরাভিয়া অঞ্চল মধ্যযুগ থেকে ওয়াইন উৎপাদন করে আসছে। চেক প্রজাতন্ত্রের প্রায় ৯৪% দ্রাক্ষাক্ষেত্র মোরাভিয়। বিয়ার, স্লিভোভিজ এবং ওয়াইন ছাড়াও চেক প্রজাতন্ত্র দুই ধরনের মদ, ফার্নেট স্টক এবং বেচেরোভকা তৈরি করে। কোফোলা হচ্ছে একটি অ্যালকোহলমুক্ত গার্হস্থ্য কোলাজাতীয় কোমল পানীয় যা কোকা-কোলা এবং পেপসির প্রতিদ্বন্দ্বী।
চেক প্রজাতন্ত্রের দুটি শীর্ষ খেলা ফুটবল এবং আইস হকি। সবচেয়ে বেশি দেখা ক্রীড়ানুষ্ঠান হচ্ছে অলিম্পিক টুর্নামেন্ট এবং আইস হকির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ।[২২৩][২২৪] অন্যান্য সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলাগুলির মধ্যে রয়েছে টেনিস, ভলিবল, ফ্লোরবল, গল্ফ, বল হকি, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল এবং স্কিইং।[২২৫]
দেশটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ১৫ টি এবং শীতকালীন অলিম্পিকে নয়টি স্বর্ণপদক জিতেছে। (অলিম্পিকের ইতিহাস দেখুন।) চেক আইস হকি দল ১৯৯৮ সালের শীতকালীন অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছিল এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বারোটি স্বর্ণ পদক জিতেছিল (১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা তিনবার)।
স্কোডা মোটরস্পোর্ট ১৯০১ সাল থেকে রেসিং প্রতিযোগিতার সাথে জড়িত এবং বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি যানবাহনের ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে। এমটিএক্স অটোমোবাইল কোম্পানি পূর্বে ১৯৬৯ সাল থেকে রেসিং গাড়ি এবং ফর্মুলা রেসিং গাড়ি তৈরির সাথে জড়িত ছিল।
হাইকিং একটি জনপ্রিয় খেলা। চেক ভাষায় 'টুরিস্ট' শব্দটির অর্থ 'তুরিস্তা', যার অর্থ 'ট্রেকার' বা 'হাইকার'। হাইকারদের জন্য, (১২০ বছরেরও বেশি পুরোনো ঐতিহ্যের কারণে) পথ চিহ্নিতের জন্য একটি চেক হাইকিং মার্কার্স সিস্টেম রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী সব দেশ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ চিহ্নিত করা ক্ষুদ্র এবং দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেইলের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে যা পুরো দেশ এবং সমস্ত চেক পর্বতমালাব্যাপী বিস্তৃত।[২২৬][২২৭]
↑"Czech language"। Czech Republic – Official website। Ministry of Foreign Affairs of the Czech Republic। ৬ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১১।
↑Citizens belonging to minorities, which traditionally and on long-term basis live within the territory of the Czech Republic, enjoy the right to use their language in communication with authorities and in courts of law (for the list of recognized minorities see National Minorities Policy of the Government of the Czech Republicওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ৭ জুন ২০১২ তারিখে, Belorusian and Vietnamese since 4 July 2013, see Česko má nové oficiální národnostní menšiny. Vietnamce a Bělorusy) ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে). Article 25 of the Czech Charter of Fundamental Rights and Basic Freedoms ensures the right of the national and ethnic minorities to education and communication with the authorities in their own language. Act No. 500/2004 Coll. (The Administrative Rule) in its paragraph 16 (4) (Procedural Language) ensures that a citizen of the Czech Republic who belongs to a national or an ethnic minority, which traditionally and on a long-term basis lives within the territory of the Czech Republic, has the right to address an administrative agency and proceed before it in the language of the minority. If the administrative agency has no employee with knowledge of the language, the agency is bound to obtain a translator at the agency's own expense. According to Act No. 273/2001 (Concerning the Rights of Members of Minorities) paragraph 9 (The right to use language of a national minority in dealing with authorities and in front of the courts of law) the same also applies to members of national minorities in the courts of law.
↑The Slovak language may be considered an official language in the Czech Republic under certain circumstances, as defined by several laws – e.g. law 500/2004, 337/1992. Source: http://portal.gov.czওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ১০ এপ্রিল ২০০৫ তারিখে. Cited: "Například Správní řád (zákon č. 500/2004 Sb.) stanovuje: "V řízení se jedná a písemnosti se vyhotovují v českém jazyce. Účastníci řízení mohou jednat a písemnosti mohou být předkládány i v jazyce slovenském ..." (§ 16, odstavec 1). Zákon o správě daní a poplatků (337/1992 Sb.) "Úřední jazyk: Před správcem daně se jedná v jazyce českém nebo slovenském. Veškerá písemná podání se předkládají v češtině nebo slovenštině ..." (§ 3, odstavec 1). http://portal.gov.cz
↑ কখগ"Národnost"। Census 2021 (চেক ভাষায়)। চেক পরিসংখ্যান অফিস। ১৫ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
↑"Náboženská víra" (চেক ভাষায়)। চেক পরিসংখ্যান অফিস। ২২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
↑Mlsna, Petr; Šlehofer, F.; Urban, D. (২০১০)। "The Path of Czech Constitutionality"(পিডিএফ)। 1st edition (চেক ও ইংরেজি ভাষায়)। Praha: Úřad Vlády České Republiky (The Office of the Government of the Czech Republic)। পৃষ্ঠা 10–11। ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১২।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)
↑Čumlivski, Denko (২০১২)। "800 let Zlaté buly sicilské" (চেক ভাষায়)। National Archives of the Czech Republic (Národní Archiv České Republiky)। ২৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১২।
↑Dijk, Ruud van; Gray, William Glenn; Savranskaya, Svetlana; Suri, Jeremi; Zhai, Qiang (২০১৩)। Encyclopedia of the Cold War। Routledge। পৃষ্ঠা ৭৬। আইএসবিএন978-1135923112। ২২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭।
↑"RP's History Online - Habsburgs"। web.archive.org। ২০১১-০৭-১৭। Archived from the original on ২০১১-০৭-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑The Cambridge economic history of Europe: The economic organization of early modern Europe. E. E. Rich, C. H. Wilson, M. M. Postan (১৯৭৭)। পৃষ্ঠা ৬১৪। আইএসবিএন০-৫২১-০৮৭১০-৪
↑Hlavačka, Milan (২০০৯)। "Formování moderního českého národa 1815–1914"। Historický Obzor (চেক ভাষায়)। ২০ (৯/১০): ১৯৫।
↑Dijk, Ruud van; Gray, William Glenn; Savranskaya, Svetlana; Suri, Jeremi; Zhai, Qiang (২০১৩)। Encyclopedia of the Cold War। Routledge। পৃষ্ঠা 76। আইএসবিএন978-1135923112। ২২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭।
↑Rothenbacher, Franz (২০০২)। The European Population 1850–1945। Palgrave Macmillan, London.। পৃষ্ঠা ১৪৫। আইএসবিএন978-1-349-65611-0।
↑"The Constitution of the Czech Republic"। web.archive.org। ২০১৫-০৯-০৩। Archived from the original on ২০১৫-০৯-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১২।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑Hloušek, Vít (২০১৫-০৩-১১)। "Is the Czech Republic on its Way to Semi-Presidentialism?"। Baltic Journal of Law & Politics। 7 (2): 95–118। ডিওআই:10.1515/bjlp-2015-0004।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Prime Minister"। Government of the Czech Republic। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑ কখগঘKuklík, Jan (২০১৫)। Czech Law in Historical Contexts। Charles University in Prague, Karolinum Press। পৃষ্ঠা 221–234। আইএসবিএন978-80-246-2860-8।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Global Peace Index 2020"(পিডিএফ)। visionofhumanity.org। Institute for Economics and Peace।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Visa Openness Report 2016"(পিডিএফ)। World Tourism Organization। ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"About the Visegrad Group"। Visegrad Group। ১৫ আগস্ট ২০০৬। ১৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Czechs with few mates"। The Economist। ৩০ আগস্ট ২০০৭। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑www.mccanndigital.cz। "Getting to know Czech Republic"। ১৯ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"World Bank 2007"। Web.worldbank.org। ২৪ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Aspalter, Christian; Jinsoo, Kim; Sojeung, Park (২০০৯)। "Analysing the Welfare State in Poland, the Czech Republic, Hungary and Slovenia: An Ideal-Typical Perspective"। Social Policy & Administration। 43 (2): 170–185। ডিওআই:10.1111/j.1467-9515.2009.00654.x।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"GDP per capita in PPS"। Eurostat। ২৪ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Brandmeir, Kathrin; Grimm, Michaela; Heise, Michael; Holzhausen, Arne। "Allianz Global Wealth Report 2018"(পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২১।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"The Global Innovation Index 2016"। The Global Innovation Index। ২০১৬। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৯।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Enabling Trade rankings"। ২১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৮।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Czech Republic to join Schengen"। The Prague Post। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৬। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০০৭।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"100 Nejvýznamnějších"। CZECH TOP 100 (চেক ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৯।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Going abroad - Czech Republic"। ec.europa.eu। ৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৮।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Bezdrátové připojení k internetu"। bezdratovepripojeni.cz। ২৩ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০০৮।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Bremner, Caroline (২০১৫)। "Top 100 City Destinations Ranking"। Euromonitor International। ২৮ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Tips on Staying Safe in Prague"। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Global Innovation Index 2021"। World Intellectual Property Organization (ইংরেজি ভাষায়)। জাতিসংঘ। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"The Czech Academy of Sciences"। www.avcr.cz। The Czech Academy of Sciences। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২১।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Czech Made"। www.czech.radio। Radio Prague International। ১৯ জানুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২১।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Klicperová-Baker, M.; Hoskovcová, S.; Heller, D. (২০২০)। "Psychology in the Czech lands: Bohemia, Czechoslovakia, and the Czech Republic"। International Journal of Psychology। 55 (2): 133–143। এসটুসিআইডি196613980। ডিওআই:10.1002/ijop.12607। পিএমআইডি31304980।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Research and Innovation Ranking"। www.scimagoir.com। Scimago Institutions Rankings। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২১।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Foreigners working in the Czech Republic"। Ministry of Foreign Affairs। জুলাই ২০০৬। ৩ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০০৯।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"The History and Origin of the Roma"। Romove.radio.cz। ২৫ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Foreigners in the Czech Republic - 2017। Prague: Czech Statistical Office। ২০১৭। আইএসবিএন978-80-250-2781-3।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"The Virtual Jewish Library"। ২১ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"První výsledky Sčítání 2021"(পিডিএফ)। Czech Statistical Office। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০২২।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"End of year 2014 – Czech Republic"(পিডিএফ)। Wingia.com। ৯ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৮।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"NÁBOŽENSKÁ VÍRA OBYVATEL PODLE VÝSLEDKŮ SČÍTÁNÍ LIDU"। Czech Statistical Office। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। ১৩ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭। Chapter 1. "Změny struktury obyvatel podle náboženské víry v letech 1991, 2001 a 2011"; table "Struktura obyvatel podle náboženské víry (náboženského vyznání) v letech 1991 - 2011": believers 20,8%; non-believers 34,5%; no declared religion 44,7%উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Richard Felix Staar, ''Communist regimes in Eastern Europe'', Issue 269, p. 90
↑The Czechoslovak Hussite Church contains mixed Protestant, Catholic, Eastern Orthodox and national elements. Classifying it as either one is disputable. For more details and dispute about this, see Czechoslovak Hussite Church.
↑"Wayback Machine"। web.archive.org। ২০২২-০১-২৪। Archived from the original on ২০২২-০১-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২২।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑"Euro Health Consumer Index 2016"(পিডিএফ)। Health Consumer Powerhouse। ১৪ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৭।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑ কখগঘ"History of Czech Architecture"। eu2009.cz। Czech Presidency of the European Union। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"The History of Architecture"। www.czech.cz। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Kotalík, Jiří (২০০২)। Architektura barokní (চেক ভাষায়) (Deset století architektury সংস্করণ)। Prague: Správa Pražského hradu a DaDa। পৃষ্ঠা 13। আইএসবিএন978-80-86161-38-9।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Codex Gigas: The Devil's Bible"। Prague Post। ১৯ অক্টোবর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০২১।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Dějiny české hudby v obrazech (History of Czech music in pictures); in Czech
↑"Czech Music"। ২৭ জুন ২০০৭। ২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"History of Czech cinematography"। ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Solomon, Charles (১৯ জুলাই ১৯৯১)। "Brooding Cartoons From Jan Svankmajer"। LA Times। ১৫ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"KFTV"। Wilmington Publishing and Information Ltd। ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১২।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Czech Film Commission – Karlovy Vary"। Czech Film Commission। ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১২।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Digital News Report 2021"। Reuters Institute for the Study of Journalism। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Online data (OLA) | SPIR"। www.netmonitor.cz। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Prague's Most Popular Sports"। Prague.fm। ২১ অক্টোবর ২০১১। ১৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Hiking in the Czech Republic"। Expats। ১৬ জুন ২০১১। ২৩ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Turistické značení KČT"। KČT। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Angi, János (১৯৯৭)। "A nyugati szláv államok" [Western Slavic states]। Pósán, László; Papp, Imre; Bárány, Attila; Orosz, István; Angi, János। Európa a korai középkorban [Europe in the Early Middle Ages] (হাঙ্গেরীয় ভাষায়)। Multiplex Media – Debrecen University Press। পৃষ্ঠা 358–365। আইএসবিএন978-963-04-9196-9।