Svoboda | Graniru | BBC Russia | Golosameriki | Facebook

অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"আমি নিজেকে নতুন করে ডিসকভার করার একটা জার্নিতে আছি"


 সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন
 সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন

সম্প্রতি আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের সৃজনশীল জগতের সব্যসাচী তারকা, বিশিষ্ট ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, গীতিকার, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, অভিনেতা, লেখক, ক্যাম্পেইন বিশেষজ্ঞ, এক্টিভিস্ট ও বুদ্ধিজীবী, সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনের সঙ্গে। টেলিফোনে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে শাওন কথা বলেছেন একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় শিল্পকলার বিভিন্ন শাখায় কাজ করার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে এবং তার সর্বশেষ ব্রেন চাইল্ড কোক ষ্টুডিও বাংলা ও রিক্সা গার্ল নিয়ে। আমাদেরকে শাওন আরও বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে বানানো হাসিনা: এ ডটার্স টেল তৈরির টুকরো গল্প, নিজের লেখালেখি, এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি, 'মি টু' মুভমেন্ট নিয়ে তার ভাবনা সহ আরও বেশ কিছু বিষয়। ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শতরূপা বড়ুয়া।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি তো কোক স্টুডিওর প্রোডাকশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ ধরণের একটি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পেছনে আপনার মূল মোটিভেশন কী ছিলো ?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: আমি আসলে কোক স্টুডিও বাংলার ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার, সো আমার তো অফিসিয়ালি একটা দায়িত্ব আছে। এই দায়িত্বটা নেয়ার পেছনে দু'রকমের রিজন আছে। একটা হলো অফিশিয়াল যে রিজন, আমি যেহেতু গ্রে অ্যাডভারটাইজিংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার এন্ড ক্রিয়েটিভ চিফ, কোকাকোলার ব্র্যান্ডটা আমরা বাংলাদেশে দেখাশোনা করি অ্যাডভারটাইজিং, প্রোমোশন এগুলোর জায়গা থেকে। সো এটা একটা অফিশিয়াল রেসপনসিবিলিটি আছে। দ্বিতীয়ত আমি আসলে সবসময় মনে করি যেটা, দ্যা লার্জার রিজন, মোর ফিলোসফিক রিজন সেটা হলো আমাদের এখানে আসলে প্রোডিউসিংটাই মূল সমস্যা। এখন সিনেমা হোক, ওটিটির একটা সিরিজ, কন্টেন্ট হোক কিংবা গানের কোনো প্লাটফর্ম হোক আমাদের আসলে সমস্যাটা একদম প্রোডিউসিংয়ে। এবং প্রোডিউসার কিন্তু আসলে ইনভেস্টার না, প্রোডিউসার আসলে ডিরেক্টর না, প্রোডিউাসার আসলে হচ্ছে মোর অফ এ প্রোজেক্ট ম্যানেজার। যে পুরো প্রোজেক্টটাকে ক্রিয়েটিভলি ম্যানেজ করে। সো ওই জায়গাটা থেকে আমার সবসময় মনে হয়েছে একটা গ্যাপ আছে, কোথাও না কোথাও এটা নিয়ে আসলে কাজ করা উচিৎ কিন্তু হচ্ছে না। ট্যালেন্টড মানুষজন আছে, সিঙ্গার আছে, টেকনিক্যাল লোকজন আছে, গায়ক আছে, যন্ত্রী আছে কিন্তু সেই প্রোডিউসার নেই যে আসলে সবাইকে নিয়ে একটা এক্সলেন্স ডেলিভার করবে। এই কাজগুলো যখনই শিল্পীরা কিংবা যন্ত্রীরা করতে গেছে তখনই তারা আসলে তাতে ফেল করেছে যেহেতু এটা তাদের কাজ না। আর এর বাইরে যেহেতু আমি নিজেও একজন রাইটার তো সেটাও আমাকে একধরণের উৎসাহিত করেছে। মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি একটা ছোট জিনিস বলতেই চাই যে আমি ছোটবেলা থেকেই গানের পরিবেশে বড় হওয়া। আমার মামা, আমার বাবার পরেই, যে গডফাদার আমার, সাদী মোহাম্মদ। সাদী মামার কাছে আমি একদম সাথে থেকেই বড় হয়েছি। তো গানের ব্যাপারে আমার এই ভলোবাসাটা আসলে অনেক ছোটবেলার। সো ওইটাও একটা শখ, মানুষ তো তার ছোটবেলা থেকে আসলে বেরুতে পারে না। তো ওইটাও একটা বোধহয় রিজন ছিলো...মেইন মোটিভেশন ফর মি।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এই ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসারের জায়গা থেকে, উপমহাদেশে যে কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া আছে, কোক স্টুডিও পাকিস্তান আছে, এই দুটোর সাথে আপনি কোক স্টুডিও বাংলার পার্থক্যের জায়গাগুলো কোথায় দেখতে পান?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: নানারকম পার্থক্য আছে আসলে। একটা হলো দর্শনগত জায়গা থেকে আমরা কী করে আলাদা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আরেকটা হলো এইটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে শুরুর দিকে, অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। আমি সবসময় এভাবে কথা বলাটা ঠিক না, কিন্তু আমি আমার মতো করে বলতে চাই, আপনি খেয়াল করবেন, লক্ষ্য করে দেখবেন যে কোক স্টুডিও বাংলা লোগোটা যেভাবে করে করা হয়েছে। লোগোটা তো অলমোস্ট সেম কোক স্টুডিও পাকিস্তান, কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া। বাংলা যেভাবে লেখা আছে লোগোর ভিতরে এটা কোনো কোক স্টুডিওর লোগোতে নেই। শুরুতেই ওদের সাথে এ ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার করেছিলাম, দেখো আমাদের জন্য ভাষাটা খুব জরুরী। এবং আমি এটাকে কোক স্টুডিও বাংলাই বলতে চাই, বাংলাদেশ বলতে চাইনা। থ্যান্কস টু কোকোকোলা আমার এ চাওয়াটা সুন্দরভাবে অ্যাক্সেপ্ট করেছে। আমাদের কথা ছিলো দুটো জিনিস, একটা হলো, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যে দেশের নাম তার ভাষা দিয়ে। দ্বিতীয়ত আমাদের যে ইতিহাস, আপনি যদি বলেন স্বাধীনতার ইতিহাস এবং তার পূর্ব ইতিহাসে যদি ফেরত চলে যাই। বঙ্গবন্ধু কিন্তু ভাষার ভিত্তিতে দেশটাকে ভাগ করেছিলেন। দু'শ বছরে কিন্তু জাতিরাষ্ট্র বলতে একমাত্র বাংলাদেশই স্বাধীন হয়েছে। তার ভাষার ভিত্তিতেই স্বাধীন হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান যে ভাগ করেছিলো সেই পথ থেকে সরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কিন্তু ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করেছিলেন। বলেছেন যে, এদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান সবার দেশ হবে। এটা বাঙ্গালী জাতিসত্তার দেশ হবে আসলে। যেখান থেকে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের কথা আরকি। আমার কাছে সব মিলিয়ে মনে হয়েছে আমি যদি বাংলাকে নিয়ে কাজ করি তাহলে আমি আরও বড় একটা কমিউনিটিকে নিয়ে কাজ করতে পারবো। বড় একটা ভাবনাকে নিয়ে কাজ করবো। এবং আজকের দিনে তো আমরা বুঝতেই পারছি, এই রাইটিস্টদের উত্থানের সময়ে, আমরা আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়ে পরিচিত হতে পারলেই একধরণের একটা অগ্রসরমান পথে আগাবো। এক ধরণের অসম্প্রদায়িক পথে আগাবো। সে সবকিছু ভেবেই এটা করেছি। আর যদি কমার্শিয়াল রিজন বলেন তাহলে দেখবেন যে আমরা যেভাবে করে ত্রিশ পয়ত্রিশ কোটির কথা বলতে পারি বাংলা বললে সেখানে বাংলাদেশ বললে কোথায় যেনো একটা ম্যাপ একটা বর্ডার চলে আসে। যেটা গানের ক্ষেত্রে, মিউজিকের ক্ষেত্রে খাটে না। দ্বিতীয়ত আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের বাংলার ইতিহাস তো হাজার বছরের ইতিহাস। বাঙালীর ইতিহাস তো এমন না যেটা বায়ান্ন থেকে শুরু হলো কিংবা সাতচল্লিশ থেকে শুরু হলো । বাঙালির ইতিহাস তো, খ্রিস্টের জন্মেরও চারশ বছর আগে থেকে এখানে সভ্যতা। সো আমাদের যে পুরো সভ্যতা এত বছর ধরে এটা থেকে যে সংস্কৃতি যে গান যে সুর সেটা তো তার নিজের মতো করে একেবারেই আলাদা। সেটাকে ধরতে পারার চেষ্টাই কিন্তু আসলে কোক স্টুডিও বাংলার চেষ্টা। যে আমরা কি করে শেকড়ের গানকে আজকের যে... একদিকে এই কথা যেমন সত্য তেমনি আরেকদিকে দেখবেন যে আমাদের ডেমোক্রেটিক রিয়েলিটিজ ভেরি ইন্টারেস্টিং। ৬৫% বিলো ৩৫ পপুলেশন। ইয়াংগার পপুলেশন যারা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে চায়। যারা বৈশ্বিক হতে চায়। এই ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের জামানায়। তাদেরকেও তার নিজের শেকড়ের সাথে বিউটিফুলি কনটেম্পারারি ওয়েতে তাকে আসলে গানটা শোনাতে হবে। আগের মতো করে শোনালে সে শুনবে না। সে নজরুলের আগে হয়তো শোনেনি, বাগিচায় বুলবুলি। কিন্তু আমি ল্যাটিন বিটে করেছি, আমরা যখন নতুন করে করেছি তখন এই ভার্সনটা তার খুব ভালো লাগছে। সো এটাও একটা দায়িত্ব বলে মনে হয়েছিলো আমাদের কাছে। এবং এই কাজগুলো করতে গিয়ে এটা আসলে নিজের মতো করেই কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া, কোক স্টুডিও পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছে। অন্য কোনো কারণে নয়। কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া তো একেবারেই...ওরা তো বলিউডকে অতিক্রম করতে পারে না কখনওই কাজ করতে গিয়ে। ওদের জন্য এমনিতেও খুব ডিফিকাল্ট এটা। পাকিস্তান ইজ আ ভেরি গুড এক্সাম্পল অফ হোয়াট দ্যা মিউজিক অফ রুট ক্যান বি। কিন্তু সেটা হলেও আমাদেরটা আমাদের মতো করে খুবই আলাদা। আমাদের ইয়ুথরা লিরিক্সের ব্যাপারে খুব ইন্টারেস্টেড। তারা লিরিক্সটা শুনতে চায়, বুঝতে চায়। এটা তাদের কাছে খুব ইম্পোর্টেন্ট। তো ওটা জানা আমাদের জন্য খুবই ইম্পোর্টেন্ট ছিলো আমরা কোন গান সিলেক্ট করবো, কেন সিলেক্ট করবো। সবকিছু মিলিয়ে আলাদা বলেই আমার কাছে মনে হয়।

ইয়াংগার পপুলেশন যারা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে চায়। যারা বৈশ্বিক হতে চায়। এই ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের জামানায়। তাদেরকেও তার নিজের শেকড়ের সাথে বিউটিফুলি কনটেম্পারারি ওয়েতে তাকে আসলে গানটা শোনাতে হবে। আগের মতো করে শোনালে সে শুনবে না।

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন
সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন

ভয়েস অফ আমেরিকা : আপনি যে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির কথাটা বললেন সেখান থেকে আমার পরের প্রশ্ন, বাংলা ভাষাভাষীরা তো আপনি যেটা বলছেন সেটা শুধুমাত্র বাংলাদেশের সীমানার ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়। ভবিষ্যতে অনাবাসী বাংলাদেশী বা ডায়াস্পোরা বাঙালীবা বিশেষকরে পশ্চিমে যে বাঙালীরা বেড়ে উঠছে, যেমন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের যে বাঙালীরা আছেন তাদেরকে কি কোক স্টুডিওতে সম্পৃক্ত করার কোনো চিন্তাভাবনা আপনার আছে?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন : আমি আসলে কখনওই এভাবে ভাবিনি। যেমন ধরেন আমাকে এরকম একটা সিমিলার প্রশ্ন করা হয়, আমরা ওই শিল্পীকে নিয়ে কেনো কাজ করিনি, ওরকম কাকে নিয়ে কেনো কাজ করিনি। আমরা আসলে কোনো শিল্পী নিয়ে কখনও ভাবিনি। আমরা শুধু গানটা নিয়ে ভেবেছিলাম। গানটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে যে শিল্পীকে মনে হয়েছে ইন্টারেস্টিং হবে তখন সে শিল্পীকে আমরা চুজ করেছি। গানটা নিজেই শিল্পী খুঁজে নিয়েছে আসলে। এখন এটার জন্যই উত্তরটা একটুখানি আমার জন্য সরাসরি দেয়া মুশকিল, আবার অন্যভাবে ভাবতে গেলে যদি ওরকমভাবে কাউকে পেয়ে যাই যাকে দিয়ে মনে হচ্ছে এই গানটা করাতে চাই। যেমন লন্ডনে আমাদের দুজন আছে, আমি জানি। আপনি চেনেন কি না, ইদ্রিস রহমান ও জয়ী রহমান দুই ভাই বোন। ওদের অরিজিন বাংলাদেশে। অসাধারণ জ্যাজ করে ওরা। ওরা যে খুব ভালো বাংলা গাইতে পারে তা না। কিন্তু একটা ভালোবাসা আছে, ওদের একটা অদ্ভুত এক্সপ্রেশন আছে বাংলার প্রতি। ওদের সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে ওদের সাথে কোনো কাজ করা যেতে পারে। তারপরে আমাদের যে গিটারিস্ট অনি হাসান, অনি নিজের ভিডিওতেই বলেছে, ও কোলাবরেট করতে চায়। এন্ড হি ইজ এ ব্রিলিয়ান্ট গিটারিস্ট। আমরা হয়তো এরকম জায়গা থেকে অনেকের সাথে কোলাবরেট করতে চাইবো।আমাদের যে বেজ গিটারিস্ট রিসালাত ও কিন্তু থাকে লন্ডনে। ও শুধু দুটো গান বাজাতে ঢাকায় এসেছিলো।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি তো সিনেমা প্রযোজনার সঙ্গেও জড়িত। এ পর্যন্ত আপনি কটি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন এবং তারমধ্যে আপনার সবচেয়ে পছন্দের কোনটি? কেন?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: আমি তো সেভাবে ভেবে করিনি। আমি তো মূলত রাইটার। আমি শুরু করেছিলাম আয়নাবাজি দিয়ে । আয়নাবাজির স্ক্রিপ্টটা ডেভেলপ করেছিলাম। অনম তখন আমার সাথে কাজ করতো গ্রে তে। আমি তো খুব শিক্ষিত স্ক্রিপ্ট রাইটার না। আমি কাজ করতে করতে শিখেছি। পড়াশুনা করে, ইন্টারনেটে দেখে। সো, আমি যখন আয়নাবাজি লিখি আমি আসলে প্রথমে একটা কুড়ি পেজের গল্প লিখেছিলাম। লেখাটি নিয়ে আমরা (আমি আর অনম) সেটাকে আস্তে আস্তে স্ক্রিনপ্লে তে ট্রান্সফার করি। তখন অমিতাভের সঙ্গে বহুদিন ধরে বিজ্ঞাপনের কাজ হচ্ছিলো। সে আমার ভীষণ কাছের বন্ধু। সো অমিতাভকে যখন বললাম তখন অমিতাভ আগ্রহী হলো। তারপর স্ক্রীপ্টটাকে আরো দশ-বারো বার রিভাইজ করলো। রিরাইট করতে করতে তারপর আয়নাবাজি হলো। আয়নাবাজিতে আমি কো-প্রোডিউসার ছিলাম, আই ওয়াজ দ্যা রাইটার অফ দ্যা ফিল্ম। ওইটার সাকসেস আমাকে উৎসাহিত করেছিলো। আমি খুব বিশ্বাস করি যে, সিনেমা আমাদেরকে আসলে নানারকমভাবে হেল্প করতে পারে। এটা একটা লম্বা আলোচনা, তাত্বিক আলোচনায় না যাই এ মুহুর্তে। আমরা ওটা করার পরে দুটো টিভি সিরিজও করেছিলাম, একটা করেছিলাম 'অস্থির সময়ের স্বস্তির গল্প'। আরেকটা করেছিলাম... আয়নাবাজির মতো ডাবল রোল নিয়ে একটা সিরিজ করেছিলাম। এই দুটো সিরিজ ছিলো ভীষণ সাকসেসফুল। তারপর আমরা ফেলুদা করেছিলাম উইথ বাবুদা মানে সন্দীপ রায়। ওনার কাছ থেকে রাইট কিনে এনে পরমব্রত, আমি মিলে করেছিলাম। পরম খুব ভালো, আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমরা সবাই মিলে ওটাও করেছিলাম। তারপরে একটা লম্বা গ্যাপ পড়ে গিয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রীর যে ডকুমেন্টারি টা হয়েছিলো লাইফের উপরে, হাসিনা: আ ডটর’স টেল ওটা করলাম। ওটা করতে আমাদের সাড়ে পাঁচ বছর লেগেছিলো। ওটা করার পরে একটা বড় গ্যাপ পড়েছিলো। তারপরে আমি পেয়ারার সুবাস বলে একটা ছবি প্রোডিউস করি। সেটা এখনও রিলিজ হয় নাই। যেটা নুরুল আলম আতিকের ছবি। যেটাতে জয়া এবং তারিক আনাম খান অভিনয় করেছেন। এই ছবি টা খুব ইন্টারেস্টিং, অফ বিটের। ভেরি ডিফরেন্ট ফিল্ম। ফাইনালি আমরা ইউএসএ তে রিলিজ করলাম রিকশা গার্ল, যেটা এখনও আমাদের এখানে রিলিজ হয়নি। এই হচ্ছে আমার ছবির জার্নি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এখন তো এখানে বিভিন্ন থিয়েটারে রিকশা গার্ল চলছে। এই রিকশা গার্লের সাথে তো আপনি বললেন যুক্ত ছিলেন। এই রিকশা গার্লে আপনার সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টা সম্পর্কে যদি আপনি একটু বলেন?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: আয়নাবাজির পরে একটা আওয়াজ গিয়ে পৌছাঁয় এরিক জে এডামস বলে এক ভদ্রলোকের কাছে। যিনি ইনডিপেনডেন্ট প্রোডিউসার আউট অফ ক্যালিফোর্নিয়া। ও তখন আমাদের সাথে ঢাকাতে যোগাযোগ করে। নানা সূত্র ধরে আমাদের কাছে প্রোপোজালটা পৌছাঁয়। উই লাইকড দ্যা বেসিক আইডিয়া। এটা একটা বই থেকে নেয়া। নিউইয়র্ক লাইব্রেরি সিস্টেমের ... বেস্ট হান্ড্রেড বুকস এর একটি (NYPL best 100 Book for children in the past 100 years)। মিতালি পারকিনস বলে একজন আধা বাঙালি, আধা আমেরিকান, বিয়ে করেছেন একজন আমেরিকানকে, নিজে বাঙালি। ওই ভদ্রমহিলার লেখা বইটা। তো ওই বইটার রাইটটা কিনে নিয়েছিলো এরিক। সে আমাদের বলল যে এটাতে কাজ করা যায় কিনা। তখন আমি, আদিল, অমিতাভ কথা বললাম যে এটা কিভাবে করা যায়। মুশকিল ছিলো যে বইটা খুব বেশি ওয়েল রিটেন ছিলো না ফর ফিল্ম। একটা ছোট্ট পাতলা বই, বাচ্চাদের জন্য করা। এটা থেকে ফুল সিনেমা বানানোর ডিফিকাল্ট ছিলো। সো ফাইনালি ওটা নিয়ে অনেকদূর স্ক্রিনপ্লে নিয়ে কাজ করতে হয়। একদম নতুন করে লিখতে হয়। ওটাতে সময় যায়। এরপর আরো কিছু কো প্রোডিউসার অ্যাড হয় ফ্রম ইউএসএ, ফ্রম বাংলাদেশ। ফাইনালি আমরা ছবিটা বানাতে পারি। এ ছবির ব্যাপারে আমার ভিউ পয়েন্টটা হচ্ছে যে, এটা প্রথমত বানানো হয়েছিলো ফর মোর অফ আ ওয়েস্টার্ন অডিয়েন্স, আওয়ার পার্ট অফ দ্যা স্টোরি, হুইচ সাউন্ড সো নিউ টু দেম। বাট ভেরি ইন্টারেস্টিং ফর দেম বিকজ এটা একটা ওমেন ইমপাওয়ারমেন্টের স্টোরি। সো ওইটাই অ্যাট্রাক্ট করেছিলো । কিন্তু পরে যখন সিনেমাটা বানানো হয়ে যায়, তখন এটা হয়ে যায় ৭০ ভাগ ইংরেজি আর ৩০ ভাগ বাংলা। অনেকটা আপনার ওই স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের মতো। পরে ওটাকে আমি আর আদিল আবার পুরোপুরি বাংলায় ডাব করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা এটাকে বাংলায় ডাব করতে চাই। আমাদের কাছে বাংলাদেশে ছবিটার ভালো অ্যাপিল তৈরি হতে পারে দুভাবে। একটা হচ্ছে, আমাদের বেশ কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এই বইটা পাঠ্য। আমার কাছে মনে হয়েছে ওদের কাছে একটা হিউজ ইন্টারেস্ট তৈরি হবে ইংলিশ ভার্সন দেখার ক্ষেত্রে। আবার এটা যেহেতু খুব সাধারণ রিকশাওয়ালা, খেটে খাওয়া মানুষের গল্পও বটে ওইজন্য বাংলাতে ডাব করলে আমরা গ্রামেগঞ্জে ছোট শহরের সিনেমা হলগুলোতে ছবিটা মুক্তি দিতে পারি। এসব মিলিয়ে ছবিটা বানানো হয়েছে। ইন্টারেস্টিং অ্যানিমেশেনের কাজ করেছি আমরা রিকশা পেইন্টিং নিয়ে এই ছবিটাতে। সবকিছু মিলিয়ে ছবিটাকে বেশ একটা ইন্টারেস্টিং ফিল্ম বলে মনে হয়। আমার কাছে মনে হয় ঢাকাতে রিলিজ পেলে, আমরা যদি প্রোপার প্রমোশন করে, মার্কেটিং করে রিলিজ করতে পারি, দ্যা ফিল্ম হ্যাজ লটস অফ পোটেনশিয়াল।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি একটু আগে বলছিলেন আ ডটার’স টেলের কথা। সেই অভিজ্ঞতার কথা যদি আমাদেরকে খুব সংক্ষেপে বলেন।

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: এটা বলতে গেলেই তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা বলতে হয়। এটা বলা মহা মুশকিল। শুনতে খুব পলিটিক্যাল লাগে। কিন্তু বিষয়টা হলো আমার আসলে তেমন কোনো পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। সো আমি যে খুব একটা এজেন্ডা নিয়ে গিয়েছিলাম, তা না। আমি খোলা মনে গিয়েছিলাম। এবং তখন আমি ওনাকে খুব ভালো চিনিও না। এর আগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কাজে মন্ত্রীদের সঙ্গে টুকটাক যোগাযোগ ছিলো। ববির সঙ্গে একটা বন্ধুত্ব ছিলো। সিআরআইয়ের সাথে আমার কিছু কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। জয়বাংলা কনসার্ট টা আমরা লঞ্চ করেছি। তখন থেকেই আমরা বলতাম যে বঙ্গবন্ধুর উপরে কোনো প্রপার ডকুমেন্টারি নাই। এবং এই একই লিগ্যাসি যেটা এখন ক্যারি করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ওনাকে জিজ্ঞেস করলে উনি একদমই রাজি হননি। উনি বলেন আমার কোনো কথা বলার দরকার নাই। আমি এত ইমপর্টেন্ট না।আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করছি, আমি এগুলো করতে পারবো না। ববি, জয়, পুতুল সবাইকে তিনি মানা করে দিলেন। তবে ববিকে তিনি ফাইনালি মানা করতে পারেননি। ববি তাকে খুবই কনভিন্স করেছিলো। না, এটা থাকা উচিত, না হলে নেক্সট প্রজন্ম কি করে দেখবে, রেহানা আপাও বলেছিল। এসব দেখে ফাইনালি এপ্রোচ করা শুরু করি আমি। মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা কাজটা যখন করতেই চাই, তখন আমার উপর দায়িত্ব পড়লো খুঁজে বের করার কাকে দিয়ে আমরা কাজটা করাতে পারি। তখন রেজাউর রহমান পিপলুর সাথে যোগাযোগ করি। পিপলু ইনভলভড হলো। এরপর সাড়ে পাঁচ বছর শুটিং করেছি আমরা। কারণ ওনার মতো ব্যস্ত মানুষকে তো সহজে শ্যুট করা যাবে না। এমন তো না যে এক বছরে আর কিছু করবেন না, শুধু আমাদের ছবি শ্যুট করবেন সেটা তো হবে না আসলে। আমি একাই উনার ১০০ ঘন্টার উপরে ইন্টারভিউ নিয়েছি। পিপলুও নিয়েছে প্রায় ১৫০/২০০ ঘন্টা ইন্টারভিউ। ওইসব ইন্টারভিউগুলো থেকে প্রথম এক বছর আমাদের গেছে এটা ভাবতেই, যে আমরা এটাকে কোন পার্সপেকটিভে নিব। ফাইনালি আমাদের মনে হয়েছে আমরা শেখ হাসিনার গল্প বলতে চাইনা। বঙ্গবন্ধুর কন্যার গল্প বলতে চাই। যে কারণেই এটা ডটার’স টেল। এবং তখন আমরা ছোট আপাকে ইনভলভ করলাম। আমরা দেখলাম যতই আমরা চেষ্টা করি না কেন উনি ঘুরেফিরে ওনার বাবাতে ফেরত যান। যখনই বাবার কথা বলতে যান, ওনার দু’চোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকে এবং তিনি তারমধ্যেই কথা বলতে থাকেন। আমার যেটা সবচেয়ে বিষ্ময়কর লেগেছে, যেটা আপনারা ছবি দেখেও বুঝতে পারবেন যদিও সব ফুটেজ সেখানে নেই... আমরা প্রায় ৩০০ ঘন্টার ফুটেজ কেটে ৭০ মিনিটে নামিয়ে ছিলাম...সেটা হলো কখনই অন্য কাউকে বকাবকি, গালিগালাজ করেননি। উনি ওনার কথাটুকুই বলে গেছেন। একদম ওনার জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে বলে গেছেন। আমরা পরে সাউথ কোরিয়ার ডকুমেন্টারি ফেস্টিভাল থেকে ইনভাইটেশন পেলাম। সাউথ আফ্রিকা থেকে ইনভাইটেশন পেলাম। ইট হ্যাস বিকাম কোয়াইট ইন্টারেস্টিং ডকুমেন্টারি, সাইজেবল ডকুমেন্টারি ফর আ পলিটিক্যাল ফিগার, হু ইজ রেইনিং রাইট নাউ। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে এটা গ্রেট থিং। ...মিউজিক।এটা একটা স্যাটিসফাইং এক্সপিরিয়েন্স। আমাদের উপর কোনো চাপ ছিলো না, এটা আমার কাছে খুব অবাক লাগে। এটা আমাদের দেশে বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। এটা ট্রু যে ওনারা কখনও জিজ্ঞেস করেন নাই, এই শট টা দাও নাই কেনো, ওই কথাটা কেন নাই। কিংবা আমি এটা বলতে চাই। ... এইসব গুণাবলির জন্য আসলে উই অল স্টারটেড লাভিং শেখ হাসিনা।

এটা আমাদের দেশে বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। এটা ট্রু যে ওনারা কখনও জিজ্ঞেস করেন নাই, এই শট টা দাও নাই কেনো, ওই কথাটা কেন নাই। কিংবা আমি এটা বলতে চাই। ... এইসব গুণাবলির জন্য আসলে উই অল স্টারটেড লাভিং শেখ হাসিনা।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি কিছুক্ষণ আগে আমাদের বললেন, নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি। রিকশা গার্ল প্রসঙ্গে যখন আপনি বলছিলেন। তো এই ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে আরেকটা বিষয়ে আমি আপনার কাছে জানতে চাই। সেটা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের শোবিজে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে "মি টু" ধরণের যে মুভমেন্টগুলো হচ্ছে বা হয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: আমার কাছে মনে হয়, হয়ত শুনতে মনে হবে যে, খুবই হালকাভাবে আমি কথাটা বলে ফেললাম, কিন্তু আসলে, আমি যখন আজকের মেয়েদেরকে দেখি, তখন অনেক সাহস পাই। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মিটু’র সিচুয়েশনটা আসলে, যতটা আমরা ইউএসএ-তে দেখেছি খারাপ, অত খারাপ বলে আমার কাছে মনে হয় না। এটা হচ্ছে প্রথম কথা। মানে অন্তত, আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে যে, বাঙালীরা এই ব্যাপারে একটুখানি বেটার দ্যান মেনি আদার্স। আপনি যদি নর্থ ইন্ডিয়াতেও চলে যান, মানে ইফ ইউ টেক দিল্লী, বম্বে, অর দ্যাট সাইড, ইফ আই কিপ অ্যাসাইড সাউথ ইন্ডিয়া অর বেঙ্গল, তাহলে ঐ তুলনায় আসলে আমাদের এইখানে, এইটার চাপটা আমার কাছে একটুখানি কম বলে মনে হয়, কমপেরেটিভলি যা শুনতে পাই আরকি, বাইরের দেশগুলোতে। এইটা প্রথম কথা। আর দ্বিতীয় কথা আমার কাছে মনে হয় যে, আসলে এখানে দুরকমের বিষয় আছে। একটা হচ্ছে গিয়ে যে, আমরা কি কনশাস এফোর্ট গভর্নমেন্ট এন্ড থেকে বা প্রাইভেট ইন্সটিটিউশনসগুলোর জায়গা থেকে আমরা নেব। কিংবা আমরা কি রোলে মেয়েদেরকে দেখতে চাই। পপুলার মিডিয়া কি চেহারা নিয়ে মেয়েদেরকে আসলে হাজির করবে, ক্যামেরার সামনে, টিভিতে, সিনেমাতে, নাটকে, বিজ্ঞাপনে, ডকুমেন্টারিতে – সেটা একটা। আরেকটা হচ্ছে গিয়ে যে, আমাদের সরকারের জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে আমরা যে এডুকেশন, কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের যে উত্তরণের গল্প শুনতে পাই, সেটাও আমাকে একটুখানি উৎসাহিত করে। তবে, হাজার বছরের অভ্যাসের কারণে প্যাট্রিয়ার্কি আমাদের ডিএনএ’র মধ্যে ঢুকে গেছে। সো ঐ ঢুকে যাওয়াটা আসলে একদিনে পাল্টাবে না। এটার একটা সিস্টেমিক চেঞ্জ লাগবে। এবং এই সিস্টেমিক চেঞ্জ আনতে হলে, অধৈর্য্ হয়ে করা যাবে না। এটাকে একটা সিস্টেমে ফেলে, সময়ের নিরিখে এটাকে দেখতে হবে। দেখে এটাকে আস্তে আস্তে পাল্টাতে হবে। এটা কখনই একদিনে পাল্টাবে না। যেটা এক হাজার, দুই হাজার বছর ধরে তৈরি হয়েছে, সেটা একদিনে পাল্টাবে না, এক বছরে বা দশ বছরে পাল্টাবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি। সো ওটাকেও মাথায় রেখে, এক ধরনের একটা লংটার্ম ভাবনা, একটা পলিসির জায়গা থেকে, পলিটিক্যাল জায়গা থেকে, আমাদের পপুলার মিডিয়ার জায়গা থেকে, সব জায়গা থেকে এটাকে আসলে ভাবতে হবে। ভাবলেই আসলে চেঞ্জটা আসবে। একটা প্রজেক্ট করলাম, ক্যাম্পেইন করলাম, তারপর কালকে থেকে সব পাল্টে গেল, এটা আসলে ঘটবে না। সো একটা ইকোনমিক ফ্রিডম যেভাবে করে এটাকে একটুখানি আগাতে পারে, আবার ধরেন আমরা মেয়েদের সম্পত্তির ব্যাপারে, ইনহেরিট করার ব্যাপারে যে রুলস-রেগুলেশনস এ চেঞ্জ আমরা এদেশে চাই, এ রকম নানারকম ইনিশিয়েটিভের মধ্যে দিয়ে, মানে আইনের জায়গা থেকে, সোশ্যাল চেঞ্জের জায়গা থেকে, পলিটিক্যাল চেঞ্জের জায়গা থেকে, এবং পলিসি চেঞ্জের জায়গা থেকে আসলে, যেমন আমার দায়িত্বের জায়গা থেকে ধরেন, বিজ্ঞাপনে মেয়েদেরকে কিভাবে দেখাব, কি ধরনের গল্প আমি বলব, সেখানেও কিন্তু এটার ভয়ঙ্কর ইমপ্যাক্ট আছে। সো এই সবকিছু মিলিয়েই আসলে একটা কনসলিডেটেড এফোর্টের মধ্যে দিয়ে এইটা সময়ের সাথে সাথে পাল্টাবে বলে আমি মনে করি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি তো একজন গুণী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞাপন নির্মাতা। আপনি নানারকম সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনের কাজ এরই মধ্যে করেছেন। তার মধ্যে আপনার সবচেয়ে পছন্দের কাজটি কোনটি ছিল এবং কেন?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: আমি না এইটার একদমই উত্তর দিতে পারি না। আমাকে প্রতিবারই জিজ্ঞেস করে, আমি এটার কোন উত্তর দিতে পারি না, বিকজ, নিজের করা কাজ একবার করে ফেললে ঐটার প্রতি একদমই আমার কোন ভালবাসা থাকে না। মানে এটা একটা মহা সমস্যা। I live in the present and the future. ঐটা একটা ঝামেলার আমার। তো তারপরেও লোকের ভাল লেগেছে কোনটা সেটা বলতে পারি। গ্রামীণফোনের বেশ কিছু কাজ আমার বেশ পছন্দের কাজ। তারপরে বিউটিফুল বাংলাদেশ বলে বাংলাদেশের ট্যুরিজমের উপরে কাজ করেছিলাম, স্কুল অফ লাইফ বলে ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেটের সময়ে। ঐটা খুব লোকজনের ভাল লেগেছিল। তখন শুনে খুব ভাল লেগেছিল। তারপরে বিবিসি বাংলার জন্য একটা ইংরেজি শেখার একটা ক্যাম্পেইন করেছিলাম আমরা। তো ফ্রুটিকার আমাদের যেই ক্যাম্পেইনটা, সত্য বলার, দ্যাট ক্যাম্পেইন ওয়াজ ভেরি পপুলার। এখন দেখি কোক স্টুডিও বাংলার এই পুরো ক্যাম্পেইনটাই ইজ বিকামিং ভেরি পপুলার এবং লোকজনের ভাল লাগছে। এরকম ক্যাম্পেইন আছে আসলে অনেক। মানে এত ক্যাম্পেইন করেছি গত বিশ বছরে, একটু মুশকিল। প্রথম আলোর করা কিছু ক্যাম্পেইন আমার ভীষণ ফেভারেট। আমরা যেমন বদলে যাও, বদলে দাও করেছি। কিংবা যতদিন তোমার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। এই ক্যাম্পেইনগুলো আমার খুবই পছন্দের ক্যাম্পেইন।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি নানা ধরনের ক্যাম্পেইন করছেন, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছেন। এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির পক্ষ থেকে, তাদের অধিকার সম্পর্কে, বাংলাদেশের সমাজে সচেতনতা, কিংবা সংবেদনশীলতা তৈরির জন্য যদি আপনাকে একটি ক্যাম্পেইনের কাজ করতে বলা হয়, তাহলে কি আপনি কাজটা নেবেন? নিলে কেন নেবেন... যদি না নেন, তাহলে কেন নেবেন না?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: হ্যাঁ, অবশ্যই নেব। নিতে তো আমাদের হবেই, টুডে অর টুমরো। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে, এটা যারা করে, যারা এইসব জিনিস নিয়ে কাজ করে তারা আসলে একধরনের একটা মানসিকতা থেকে কাজ করে যে, যেই মানসিকতাটার কারণে আমার সাথে কখনো ওদের বনে না। বিকজ আমি আসলে এটাকে কোনভাবেই অভিয়াসলি ডিল করতে চাই না। আমার কাছে ঐ যে আপনার নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে যেই কথাটা বললাম, আমার কাছে এই বিষয়ও তাই মনে হয়। এটার একটা নিজস্ব সেনসিটিভিটি আছে, সেন্সিবিলিটির কোয়েশ্চেন আছে, আমাদের সোসাইটির একটা পয়েন্ট অফ ভিউর জায়গা আছে। সেটাকে মাথায় রেখে যদি আমাকে এনাফ ক্রিয়েটিভ ফ্রিডম দেওয়া হয়, যেখানে সেই ফ্রিডম নিয়ে আমি কাজ করতে পারব, এবং খুব শক্তপোক্ত এজেন্ডা ধরে বেঁধে দেবে না আমাকে কেউ, আমি অবশ্যই করতে চাই।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি তো অভিনয়ও করেন, তো আপনাকে যদি…

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: করিনা, জোর করে লোকে করায়। আমি একেবারেই অভিনয় করতে চাই না।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আচ্ছা ধরুন আপনাকে পুরো ফ্রিডম দিয়ে দেওয়া হল এবং আপনাকে বলা হল যে, আপনি যে চরিত্রে অভিনয় করতে চাইবেন, সেই চরিত্রেই আপনি অভিনয় করতে পারবেন। তাহলে আপনি কোন চরিত্রে অভিনয় করতে চান?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: এইটা কি করে বলব। কনটেক্সট ছাড়া তো কোন ক্যারেক্টারেরই তো কোন মানে হয় না। তবে, আমি আসলে খুবই ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টারসগুলোই করতে চাই। করতে চাই মানে কি, আসলে করতে চাই না, কিন্তু লোকে আমাকে যেগুলো দেয় সেগুলো খুব ইন্টারেস্টিংই দেয়। ধরেন, আমি আয়নাবাজিতে যে খুব ছোট্ট একটা রোলে অভিনয় করেছি। তারপর, এরমধ্যে পাপ-পূণ্যতে অভিনয় করলাম, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের। ওটা এই কুড়ি তারিখে রিলিজ পাচ্ছে। ওটাতে অভিনয় করেছি চঞ্চল ভাইয়ের সাথে, সবার সাথে। আসলে সমস্যা ঐ, আমি যেহেতু বিজ্ঞাপনে প্রচুর মানুষকে অ্যাক্টিং করিয়েছি, আমি বুঝি যে এটা আসলে কতটা, একটা পিওর এবং প্যাশন ড্রিভেন প্রফেশন। সো ফাঁকিবাজি দিয়ে কাজটা করতে হয় আমাকে আমি যখন করি, বিকজ আমার আসলে প্রিপারেশনের জন্য ঐ সময় নাই। কারণ আমি ভয়ঙ্কর ব্যস্ত একজন মানুষ। দিনে ১৩ থেকে ১৪ ঘন্টা, ১৫ ঘন্টা, ১৬ ঘন্টা আমি কাজ করি। সো আমার হাতে এই সময় থাকে না প্রিপারেশনের। আর তখনই আমার খুব মন খারাপ হয়। আমার কাছে মনে হয়, আমি সৎভাবে কাজটা করছি না। ঐজন্যই করতে চাই না। আমি সবসময় আসলে একটু ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে চেয়েছি। যেই ক্যারেক্টারগুলো একটু অড, একটু অন্যরকম। সো ঐ জায়গা থেকে ভাবলে, চঞ্চল ভাই যেগুলো করেন, বাবু ভাই যেগুলো করেন - আমাদের ফজলুর রহমান বাবু। মোশাররফও যখন যেই ক্যারেক্টারগুলো করে, কিছু কিছু ক্যারেক্টার আমার অদ্ভূত ভাল লাগে। মনে হয় যে, এই সবগুলো ক্যারেক্টারই আসলে খুব ইন্টারেস্টিং হতে পারত। কিন্তু আমি প্রথাগতভাবে অভিনেতা না, আমি কখনো শিখিনি কাজটা। আমি এজন্য আসলে খুব বড় স্বপ্ন এইটা নিয়ে দেখিনা। মানে এখন পর্যন্ত দেখিনি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: মিডিয়ার নানা জগতে, সংস্কৃতির নানা জগতে আপনার পদচারণা। তো আজকে থেকে পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, বাংলা গান, বাঙালী সংস্কৃতি, এগুলোকে আপনি কোথায় নিয়ে যেতে চান?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন অভিনয় নিয়ে। আপনি যদি আমাকে লেখক হিসেবে বলতেন, আমি উত্তর দিতে পারতাম। আমার ওখানে একটা অ্যাম্বিশন আছে। যেমন অনেক দিন ধরে আমার ছোট গল্পের একটা বই বের করার শখ। সেটা শেষ করতে পারছি না। ৭/৮ টা গল্প লিখে বসে আছি। বাকিটা, লেখা হচ্ছে না। আবার একটা উপন্যাসের প্লট নিয়ে বসে আছি। কখন লিখব সময় পাচ্ছি না। অনেকগুলো গল্প আছে যেগুলো হয়তবা হাফ লিখেছি আর লেখা হয়নি। আমি দু’টো রোলে খুব পরিষ্কার দেখতে পাই এক হল গিয়ে অ্যাজ আ রাইটার আর দ্বিতীয়ত অ্যাজ আ প্রডিউসার, স্পেশালি ক্রিয়েটিভ প্রডিউসার. এই দু’টো জায়গায় আমি রোল প্লে করতেই চাই। বিকজ আমি মনে করি, এই দু’টো রোল যদি আমি অ্যাকটিভলি করতে পারি, তাহলে আমি কিছু না কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারব ফর আওয়ার কান্ট্রি, ফর আওয়ার কালচার। আমাদের সংস্কৃতিতে আমি কিছু না কিছু একটা দিয়ে যেতে পারব। আমার কিছু অবদান থাকবে। ওটা আমি বিশ্বাস করি। তো সেই দিকেই চেষ্টা হচ্ছে। এখন জীবন ও জীবিকার চাপে তো সবসময় সবকিছু হয়না। আর যেহেতু আমি চাকরি-বাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করি, সো চাকরিটাতো সিরিয়াসলিই করতে হয়, সৎভাবেই করতে হয়। যে কারণে সময় বের করা কঠিন হচ্ছে। চেষ্টা করছি কি করে সময় বের করে কাজটাকে আরেকটু বেশি বেশি করে করতে পারি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন, এরপরে আপনি কন্টেন্ট ক্রিয়েশন করছেন। ক্রিয়েটিভ প্রোডাকশনের জায়গা আপনার একটা অত্যন্ত পছন্দের জায়গা এবং ভালবাসার জায়গা। তার চেয়েও বড় ভালবাসার জায়গা হচ্ছে আপনার লেখালেখির জায়গা। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার এপিটাফ এ কি লেখা থাকবে বলে আপনি চান?

সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন: এই সিদ্ধান্ত আমি না নেই। আমার কাছে মনে হয় যে, নিজেকে খুব সিরিয়াসলি নেওয়া ঠিক না। আমি আপনাকে আমার জীবনের ফিলোসফি বলতে পারি। আই ডোন্ট বিলিভ যে, আমার খুব সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু আছে। মানুষ যখন নিজেকে অনেক সিরিয়াসলি নেয়, তখনই মানুষ আসলে নিজেকে নিয়ে ভুল করতে শুরু করে। যতটা নিজেকে খোলামেলা, ওপেন রাখা যায়, ফ্লুইড রাখা যায় যতবেশি, ওপেন টু আইডিয়াস রাখা যায়, নিজেকে একটুখানি ভালনারেবল রাখা যায়, ততই আসলে জীবন আরো কাছাকাছি আসে। নাহলে তো মানুষ খুব পাথরের মত হয়ে যাবে। কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না, ইন্টার‌্যাক্ট করবে না। ভাববে যে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ করতে চাইবে না। সো ঐ জীবন আসলে আমার একেবারেই কাম্য না। আমি এখনও একটুখানি শেখার মোড-এ থাকি, একটু শেখার চেষ্টা করি। আমি নিজেকে নতুন করে ডিসকভার করার একটা জার্নিতে আছি। সেই জার্নি করতে করতে একটা সময়ে চলেও যাব। তারপর লোকে যা খুশি লিখুক। এতে অসুবিধা নাই কোন। কোন সমস্যা নাই।

XS
SM
MD
LG