Svoboda | Graniru | BBC Russia | Golosameriki | Facebook

অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যৌন হয়রানি: শিক্ষকের হাতে ছাত্রী নিপীড়ন কি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠেকাতে পারছে?


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ নতুন করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ। ফাইল ফটো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ নতুন করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ। ফাইল ফটো।

"তুমি তো সুন্দরী। মডেলের মত চেহারা। তুমি কেন পেছনে বসবে। তুমি সামনে এসে বস। তারপর উনি আমাকে সামনে গিয়ে বসতে বাধ্য করতেন।

"যদি ক্লাসের কোন ব্যাপার নিয়ে তার সাথে আলাপ করতে চাইতাম, তিনি বলতেন, পাঁচটার পর তার কামরায় যেতে। কিংবা লাউঞ্জে গিয়ে তার সাথে কফি খেতে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী তার বিভাগের একজন শিক্ষক সম্পর্কে বলছিলেন। এই শিক্ষার্থী ২০১১ সালে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন।

"উনি সরাসরি কিছু বলতেন না, কিন্তু আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতেন, আমি যদি ক্লাসের বাইরে তার সাথে আলাদা সময় কাটাই, তাকে সঙ্গ দেই, তাহলে আমার পরীক্ষার ফল ভাল হবে। এমনকি আমার সহপাঠীরাও সেটা বুঝতেন।"

"দিনের পর দিন তিনি এটা করেছেন। এক পর্যায়ে যখন উনি আমার কাছ থেকে কোন সাড়া পাচ্ছিলেন না, তখন আমার সাথে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করেন। পরে যখন পরীক্ষার ফল আসতে শুরু করলো, তখন দেখতে পেলাম একমাত্র এই শিক্ষকের পড়ানো বিষয়গুলোতেই আমার খুব খারাপ ফল হচ্ছে। বাকী বিষয়গুলোতে আমি তুলনামূলক ভাল করেছি।

“কিন্তু স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে আমার গড় ফল খুব খারাপ হয় অনেকটা এই শিক্ষকের পড়ানো বিষয়গুলোতে কম নম্বর পাওয়ার কারণে। মাস্টার্সে এই শিক্ষকের কোন কোর্স ছিল না, এবং আমি খুবই ভাল ফল করেছি"।

বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তার ভয়, সে সময়ের তরুণ সেই শিক্ষক তার ভাষায় এখন "এতটাই ক্ষমতাবান যে এখনো যদি জানতে পারেন আমি মুখ খুলেছি তাহলে, তিনি আমার ক্যারিয়ার খারাপ করে দেবেন।“

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পড়ছেন এমন একজন ছাত্রী বলছিলেন তার শ্রেণীকক্ষের অভিজ্ঞতা।

তিনি বলছেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একজন শিক্ষকের ক্লাস করার সুযোগ হয়েছে যিনি ক্লাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেল গেজ তত্ত্ব বা পুরুষের নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে লেকচার দিতেন।"

শিক্ষকের 'ইচ্ছায়' রাজি না হলে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করার ভয় থাকে। (ছবি- অ্যাডোবে স্টক)
শিক্ষকের 'ইচ্ছায়' রাজি না হলে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করার ভয় থাকে। (ছবি- অ্যাডোবে স্টক)

দুটো ঘটনার মধ্যে সময়ের পার্থক্য এক যুগের বেশি। কিন্তু দুজনের অভিজ্ঞতার পার্থক্য খুব বেশি না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন

তাদের সাথে এই আলাপ এমন সময়ে হচ্ছে যখন বছরের প্রথম মাস তিনটি জুড়েই বাংলাদেশে জোর আলোচনার বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ।

এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগটি বেশ আলোচিত। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসেই একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পরপর দুটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে।

দ্বিতীয় অভিযোগটি ওঠে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্রীর কাছ থেকে, যেখানে ওই অধ্যাপক একসময় খণ্ডকালীন হিসেবে কিছুদিন অধ্যাপনা করেছিলেন।

এই শিক্ষককে বরখাস্ত ও বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে ছাত্র আন্দোলন হয়। এক পর্যায়ে ওই অধ্যাপককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল-এ তদন্তাধীন রয়েছে।

এই সেলটি গঠন হয়েছিল হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে।

বাংলাদেশ হাইকোর্ট: যৌন নিপীড়ন তদন্ত সেল গঠনের নির্দেশনা। (ফাইল ছবি)
বাংলাদেশ হাইকোর্ট: যৌন নিপীড়ন তদন্ত সেল গঠনের নির্দেশনা। (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক সালমা আলীর একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের হাইকোর্ট ২০০৯ সালে এক রায় দেয় যেখানে যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

একই সাথে এই বিষয়ে বিচার প্রক্রিয়া ও অভিযোগ দায়ের করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন তদন্ত সেল গঠনের নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।

ওই রায়ের পনের বছর পর এসেও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেয়া হিসেব মতে ৪৫টি পাবলিক ও ৮৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত এমন কমিটি গঠন হয়েছে।

যদিও বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৬১টি।

দুই শিক্ষক চাকরীচ্যুত, অভিযুক্ত আরো ৫

এ বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে ১২ই মার্চ পর্যন্ত অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বাংলাদেশের খবরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগে গত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় প্রথম ছাত্র বিক্ষোভ।

সেখানে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মেলে এবং ওই শিক্ষককে চাকরীচ্যুত করা হয়।

পরে ফেব্রুয়ারি মাসে ওই একই বিভাগের আরো দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ উঠলে আবারো ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয় সেখানে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখিঃ চারপাশে মনোরম প্রকৃতি, কিন্তু ক্লাসের ভেতরে আর বাইরে মেয়েরা হুমকির মুখে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখিঃ চারপাশে মনোরম প্রকৃতি, কিন্তু ক্লাসের ভেতরে আর বাইরে মেয়েরা হুমকির মুখে।

এছাড়া মার্চ মাসে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় আরেকটি ছাত্র বিক্ষোভ। সেখানেও একটি বিভাগের দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ ওঠে।

ফেব্রুয়ারি মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত একজন শিক্ষক চাকরীচ্যুত হন। যদিও নিপীড়নের অভিযোগটি উঠেছিল এক বছর আগে।

এ বছরের শুরু দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও অবশ্য নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র বিক্ষোভ চলছিল। তবে সেই নিপীড়নের অভিযোগ কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টিরই একদল ছাত্রের বিরুদ্ধে।

বেশিরভাগই অভিযোগ করেন না

এই নিপীড়নের অভিযোগগুলোর খবর সংবাদপত্রে এসেছে কারণে নিপীড়নের শিকার যারা হয়েছেন তারা মুখ খুলেছেন। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তারা করেছেন। এবং সেই অভিযোগের জের ধরে ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছে।

কিন্তু শুরুতেই নাম প্রকাশ না করা যে দুজন ছাত্রীর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে, তারা কোন দিন অভিযোগ করেননি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল আলীম ২০২৩ সালে একটি গবেষণা করেছেন যেখানে তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ জন ছাত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

এই গবেষণায় তিনি দেখতে পেয়েছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন যেসব ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হন, তাদের শতকরা ৯০ ভাগই কোন রকম অভিযোগ করেন না।

ড. আলীম বলছেন, চিত্রটা কমবেশি একই রকম সব জায়গায়।

"একটা ট্যাবু থাকে। সোশ্যাল ট্যাবু হচ্ছে, মেয়েরা যদি অভিযোগ করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেক্ষেত্রে মেয়েরা এখানে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে না। সে গ্রেডিংয়ে খারাপ করবে। তাকে ফেল করিয়ে দেবে", বলছেন ড. আলীম।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল আলীম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল আলীম।

যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল নিয়ে প্রশ্ন

ড. আলীমের গবেষণায় যে ১০% ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন, তাদের মাত্র অর্ধেক সংখ্যক অভিযোগ করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল-এ।

যদিও এই সেলের কার্যকারীতা নিয়ে সংশয় আছে ড. আলীমের।

তিনি বলছেন, "বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটি হাইকোর্টের আদেশ ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করেনি। যেগুলোতে আছে, সেগুলোও নামমাত্র কমিটি"।

"কমিটিগুলোতে সমস্যা আছে। ট্রেনিং নেই তাদের। ভিকটিমদের সাপোর্ট সেন্টার নাই যেখানে তাদের রক্ষা করবে। তারা মনে করে তারা বিচারের আসনে বসে আছে এখানে। তারা শুধু বিচার করবে। তদন্ত যে সঠিকভাবে কিভাবে করতে হবে এই বিষয়গুলো তারা জানে না"।

ড. আলীম বলছেন, এই কমিটিগুলো ঠিকঠাক প্রক্রিয়া মেনে কাজ না করায় অনেক সময় অভিযুক্ত হাইকোর্টে গিয়ে নিজের পক্ষে রায় নিয়ে আবার ফিরে আসে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন ড. আলীম যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শাস্তি পাবার পর তিনি উচ্চ আদালতে গিয়ে নিজের পক্ষে রায় নিয়ে আবার ফিরে আসেন।

যে আইনজীবীর রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিল, সেই সালমা আলী এখন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট।

তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষিকাকে উদ্ধৃত করে বলছিলেন, কমিটিগুলো "সব আইওয়াশ"।

"সেখানে যেই নিয়মকানুনগুলা আছে, টাইম ফ্রেম ধরা আছে, সেই জায়গাগুলার কোন জায়গাতে তারা একর্ডিং টু হাইকোর্ট গাইডলাইন, সেভাবে সেই কাজটা করছে না"।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট সালমা আলী।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট সালমা আলী।

যদিও কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত কমিটিগুলো ভাল কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন সালমা আলী।

ড. আলীম বলছেন, কমিটি অনেক সময় সুপারিশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেট বেশিরভাগ সময়ে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয় না।

জিনাত হুদার সুপারিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন বর্তমান ছাত্রী, যার অভিজ্ঞতার কথা এই প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কমিটির প্রধান জিনাত হুদা বলছেন, তার সময়কালে মোট তিনটি অভিযোগ তার কাছে এসেছিল। তিনি তিনটিই তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত সুপারিশ দিয়েছেন। এবং তিনটি ঘটনাতেই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তার সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিল।

"আমি তো একা না, আমরা যে সুপারিশ করেছি সেই সুপারিশ অনুযায়ীই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কোন ব্যত্যয় হয়নি", বলছিলেন অধ্যাপক জিনাত হুদা।

অধ্যাপক হুদা প্রায় দুবছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেলের প্রধান।

তিনি যে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে কী ধরণের সুপারিশ করা হয়েছে বা কী শাস্তি দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বলতে রাজী হননি।

তবে এই সময়কালে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে, একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, আরেকজনকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

তবে এই তিনটি ঘটনাই অধ্যাপক হুদার উল্লেখ করা তিনটি ঘটনা কি না তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সব প্রতিষ্ঠানে কমিটি নেই?

"নামমাত্র কমিটি" বা "আইওয়াশ" হওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে পনের বছর পার হয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পর্যন্ত কোন কমিটিই গঠন করেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইকোর্ট নির্দেশিত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের।

Mouli Azad, deput director at the University Grants Commission.
মৌলি আজাদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উপ পরিচালক।

কমিশনের উপপরিচালক মৌলি আজাদ বলছেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও কমিটি হয়নি, সেগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম এখনো ঠিকঠাক শুরু হয়নি।

তবে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে ও তাদের ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এগুলো বেশ পুরনো হওয়া সত্ত্বেও এমন কোন কমিটি সেখানে নেই।

মৌলি আজাদ বলছেন, "ইউজিসিতে যথেষ্ট জনবল নেই। তাই আমরা সবসময় ভিজিট করতে পারি না। কিন্তু যখনই আমরা এ ধরণের ঘটনা দেখি, সাথে সাথে আমরা এটাকে অ্যাড্রেস করি, বিশ্ববিদ্যালয়কে, তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন"।

তবে মৌলি আজাদ বলছিলেন, কমিটিগুলো গঠন করার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হলেও এগুলি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না সেটা দেখার দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির।

কিন্তু মহিলা আইনজীবী সমিতির সালমা আলী বলছেন, "আমরা অনেক যায়গায় যাই দেখি কমিটি করা হয়েছে, কিন্তু কমিটি কোন রিপোর্ট দেয় না"।

তবে মহিলা আইনজীবী সমিতি অর্থ ও লোকবলের অভাবে এটা আরো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারছে না বলে স্বীকার করেন সালমা আলী।

এদিকে মৌলি আজাদও স্বীকার করেন যে, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি থাকলেও চিঠি দেওয়ার পরও তারা বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠায় না বা পাঠাতে গড়িমসি করে।

নিপীড়ন ঠেকাতে কমিটি যথেষ্ট?

"আমার মনে হয় কমিটি অ্যাডেকুয়েট", বলছেন মৌলি আজাদ।

"কমিটি ভাল কাজ করে। ঠিকই সুপারিশও দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করে আমার কাছে মনে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত সিন্ডিকেট অনেক সময় ওদের বিভিন্ন প্রভাবে সেটা কার্যকর করতে চায় না"।

জিনাত হুদা মনে করেন, কমিটির সুপারিশগুলো ঠিকঠাক বাস্তবায়ন হলে সেটা নিপীড়ন কমাতে সাহায্য করবে।

তিনি প্রতিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সাথে সাথে কিছু সুপারিশ জুড়ে দেন বলে জানান।

যেমন তিনি বলছেন, আগামী তদন্তের সাথে তিনি সুপারিশ জুড়ে দেবেন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন ভবিষ্যতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা সেশন রাখা হয় যেখানে সচেতন করা হবে দুই পক্ষকেই।

তিনি বলছেন, তিনি এর আগে একটি সুপারিশ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পদে চাকরিতে যোগ দান করার সময়ে একটা শর্ত জুড়ে দিতে হবে সব জায়গায়, যেখানে প্রার্থীকে ঘোষণা দিতে হবে যে, তিনি কখনো কোন নিপীড়নের সাথে যুক্ত ছিলেন না এবং ভবিষ্যতেও হবেন না।

"আমি ঢোকার সময়েই জানছি যে এসমস্ত কাজের সাথে যুক্ত হলে কিন্তু আমার চাকরিটি চলে যাবে। ফ্রম দ্য ভেরি বিগিনিং আমি অ্যাওয়ার হয়ে যাই (শুরু থেকেই আমি সচেতন হয়ে যাই)। এটাও আমি বলেছি"।

অধ্যাপক হুদা বলছেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সব কর্মক্ষেত্রেই চাকরির শর্ত হিসেবে এটি যুক্ত থাকতে পারে।

ড. আব্দুল আলীম এবং সালমা আলী মনে করেন, শুধু হাইকোর্টের নির্দেশনাই না, একটা পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণীত হওয়া উচিত এই ইস্যুতে।

সালমা আলী বলছেন, আইন হলেই যে সেটির প্রয়োগ হবে এমন নয়, কিন্তু এমন একটা আইন যে আছে সেটা মানুষের মাথায় ঢুকে যাবে।

সেক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের ঘটনা আরো কমে আসবে বলেও আশা করেন তিনি।

XS
SM
MD
LG